যদিও, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা নিয়ে আসা কতটা কঠিন হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইউরোপকে এমন এক স্বৈরশাসকের সঙ্গে একা ছেড়ে দেয় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠিত নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং এমনকি বেসামরিক লোকদের হত্যা করা বন্ধ করে না, তবে কী ঘটতে পারে? অবশ্য ইউক্রেন বারে বারে আশংকার কথা জানিয়ে বলেছে, রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। সেই বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। এ নিয়ে লিখেছেন রেনে ফিস্টার, ব্রিটা স্যান্ডবার্গ ও ক্রিস্টোফ শুল। আজ প্রথম কিস্তি।
২০১৮ সালের ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি ঐতিহাসিক কোনো সিদ্ধান্ত চাও?’ এর ঠিক আগেই রাতেই ইউএস প্রেসিডেন্ট কাটিয়েছেন ব্রাসেলসে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিশনে। আর ঐ উক্তির সময় তিনি দীর্ঘ সময় কাটাবেন সম্মেলনে। ট্রাম্প তখন নতুন কিছু নাড়াচাড়া দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। আগের রাতে ট্রান্স আটলান্টিক রাষ্ট্রগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে মিটিং করে তার মেজাজ কিছুটা বিগড়ে ছিল। কারণ ট্রান্স আটলান্টিক দেশগুলোর আবারো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে অনীহা জানিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন প্রকল্প বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ‘আমরা বেরিয়ে এসেছি’—ট্রাম্প তার বিচলিত উপদেষ্টাদের কাছে বলেছিলেন। তিনি আরো যোগ করেছিলেন: ‘তারা যে অর্থ প্রদান করছে আমরা তার সঙ্গে লড়াই করতে যাচ্ছি না।’ তার ইঙ্গিত ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে ইউরোপের অনেক দেশের নির্ভরতা বিষয়ে।
বোল্টন তার স্মৃতিচারণে বর্ণনা করেছেন, তিনি তখন চিন্তা করেছিলেন, ট্রাম্প যদি তার পরিকল্পনাটি চালিয়ে যান, তবে দিনের শেষে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না। অবশেষে সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওর সঙ্গে একসঙ্গে মিলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর যদি ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফিরে আসেন, তবে এটি জোটের কলিজায় ভালোভাবেই বিদ্ধ হবে। মার্চের শুরুতে বোল্টন ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে, আমি মনে করি তিনি হয়তো ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এবং আমি মনে করি পুতিন এটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।’ বেশ কয়েকটি বিভ্রান্তি পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে বেশ কিছু বিভ্রান্তি বেরিয়ে এসেছে। যেমন, মনে করা হয় যে রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অথবা পুতিনের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি শুধু ক্রেমলিনের চিরাচরিত হম্বিতম্বি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ মার্চের শেষে বলেছিলেন, ‘যারা সীমান্ত পরিবর্তনের জন্য সহিংসতার আশ্রয় নেয় তারা এটা বারবার তা করবে। এবং সেই কারণেই আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে নিজেদেরকে যথেষ্ট শক্তিশালী করতে হবে যাতে এটি না ঘটে।’ পুতিনের আগ্রাসনের জবাবে, শোলজ বলেছেন যে তার সরকার জার্মানির প্রতিরক্ষায় ১০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করতে চায়, অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বছরের শেষ নাগাদ একটি জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা জার্মানির স্বার্থকে প্রতিফলিত করবে। বিস্ময়কর হলেও বার্লিন এর আগে কখনো এমন কৌশল গ্রহণ করেনি।
ইতিমধ্যে, যদিও, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা নিয়ে আসা কতটা কঠিন হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইউরোপকে এমন এক স্বৈরশাসকের সঙ্গে একা ছেড়ে দেয় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠিত নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং এমনকি বেসামরিক লোকদের হত্যা করা বন্ধ করে না, তবে কী ঘটতে পারে? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা আমেরিকান থিংক ট্যাংকগুলো বর্তমানে বার্লিনের সরকারের চেয়ে আরো গভীরভাবে অবলোকন করছে। আবার এটাও মনে হয়, জার্মান সরকারের বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ওয়াশিংটনের একটি থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস-এর ম্যাক্স বার্গম্যান বলেছেন, ‘২০১৬ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন আমি তার প্রতি জার্মানির নিষ্ক্রিয়তা খুঁজে পেয়েছি। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি কীভাবে, ইউরোপীয়রা কী করে এমন ভান করবেন যে যত দিন আমেরিকা বিশ্বস্ত থাকবে তত দিন তারা ভাবে যে কিছুই পরিবর্তিত হয়নি।’ যত দিন জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে আছেন তত দিন এটি হতে পারে। কিন্তু ৭৯ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটের অনুমোদনের রেটিং ঐতিহাসিকভাবে কম এবং নভেম্বর ২০২৪ নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, দলটির বিকল্প প্রার্থীও আছে বলে মনে হয় না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct