ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপের একটি অংশে হলেও মিশর ও আরব বিশ্বের কিছু দেশে তার বিষ নিঃশ্বাস পড়ছে। দরিদ্র মিশরীয়রা গমের রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করেন। মূলত মিশরীয়দের কাছে গমের রুটি প্রিয় খাবার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিশরে বছরে ৯৩ মিলিয়ন রুটি উৎপাদিত হয়। মিশরকে ফি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন গম আমদানি করতে হয়। প্রায় সবটুকুর উৎস হল রাশিয়া-ইউক্রেন। তাই গম আমদানির ক্ষেত্রে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে মিশরকে। কারণ, গম আমদানি করতে না পারলে মিশরের জনগণের জন্য সমূহ বিপদ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন বজলুর রশীদ। আজ শেষ কিস্তি।
ইউক্রেন সঙ্কটে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন অংশে গম-রুটির অভাব ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। লাখ লাখ মানুষ এরই মধ্যে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে কিছু দেশে বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যদি কোনো যুদ্ধ এসব সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়, তা হলে তা মিশর, ইয়েমেন, লিবিয়া, লেবানন ও অন্যান্য দেশের মতো খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্রমবর্ধমান শক্তি ও খাদ্যের দামের মধ্যে, ইউক্রেন সঙ্কট বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করে বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গত বছর মার্কিন কৃষি বিভাগ এক গবেষণায় প্রকাশ করে, মধ্যপ্রাচ্যে ২৬ মিলিয়ন টনেরও বেশি গম আমদানি করেছে যার বেশির ভাগই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এ অঞ্চলটি বিদেশি শস্যের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তুলবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যা গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বৃদ্ধি পায়, যা ইরান, ইরাক ও সিরিয়ায় গমের ফলনকে প্রভাবিত করে। ইয়েমেনে রুটি লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি বিলাসিতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে সাত বছরের যুদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। ডব্লিউএফপির মতে, সিরিয়ার ১২.৪ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সাথে লড়াই করছে, অথচ ২০১১ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও পরবর্তী গৃহযুদ্ধের আগে, জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল, কিন্তু এখন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। গত বছর রাশিয়া থেকে ১.৫ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্বব্যাপী গম সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের ক্ষুধা সঙ্কট এবং খাদ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি গভীরতর হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলেছে, ইউক্রেন সঙ্কট মিশরের মতো আমদানিনির্ভর, ইয়েমেনে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম, বিশেষ করে শস্যের দাম বাড়িয়ে তুলছে। গত এক বছরে অনেক এলাকায় খাদ্য খরচ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ইয়েমেনের সঙ্ঘাত, রুটির অভাব ও মুদ্রাস্ফীতি লাখ লাখ ইয়েমেনিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান ডেভিড বিসলি মিশর ও ইয়েমেন প্রসঙ্গে কঠিন কথা বলেছেন, ‘এখন অবস্থা এমন যে, ক্ষুধার্তদের খাওয়ানোর জন্য অন্য ক্ষুধার্তের কাছ থেকে খাবার নেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই’! (সমাপ্ত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct