জ্বালানি নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে মানুষের মৃত্যুর থেকে শুরু করে স্কুলের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সময়মতো কাগজ না পাওয়া এবং বিদেশে দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া—এই সব ঘটনা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশাকে তুলে ধরছে। এই সময়ে ডলারের বিপরীতে লঙ্কান রুপির দাম রেকর্ড পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে। জ্বালানি সঙ্কটের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার আগামী আরও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি হওয়অর সম্ভাবনা উজ্জল হয়ে উঠছে। এর ফলে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। খোদ প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব নিয়ে লিখেছেন আনসা বিনত-ই-ফায়াজ। আজ শেষ কিস্তি।
জ্বালানি নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে মানুষের মৃত্যুর থেকে শুরু করে স্কুলের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সময়মতো কাগজ না পাওয়া এবং বিদেশে দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া—এই সব ঘটনা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশাকে তুলে ধরছে। এই সময়ে ডলারের বিপরীতে লঙ্কান রুপির দাম রেকর্ড পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে। কলম্বো কর্তৃপক্ষের দ্বারা মুদ্রা অবমূল্যায়নের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম সরকারিভাবে ২৯৪ রুপিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অবনতি মাত্র কয়েক মাসে হয়েছে।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমতে কমতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে অবস্থান করছে। অথচ চলতি অর্থবছর শেষে দেশটিকে ৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক দেনা পরিশোধ করতে হবে। দেশটিতে এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুর্দশার ফলে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। শ্রীলঙ্কার আজকের এই সংকটের জন্য অনেক কারণ দায়ী। এর মধ্যে কিছু কারণ অতি তীব্র হয়ে ওঠায় বিপর্যয় ত্বরান্বিত হয়। পর্বতসমান সরকারি ঋণ কলম্বোর অন্যতম মূল সমস্যা হিসেবে আগে থেকেই ঝুঁকি তৈরি করছিল। এর কারণ দেশটির বাজার ঋণের ৪৭ শতাংশ গ্রহণের পাশাপাশি রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৩ শতাংশ, চীন ও জাপান ১০ শতাংশ করে, বিশ্বব্যাংক ৯ শতাংশ এবং ভারতের ২ শতাংশ ঋণ। এই পরিস্থিতির মধ্যে কভিড-১৯ মহামারি শুরু এবং. বিধি-নিষেধ দেশটির অর্থনীতিকে মারাত্মক ধাক্কা দেয়।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকেটর কারণগুলোর মধ্যে প্রথমত পর্যটনশিল্পের ধস দায়ী। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটিতে ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটক আসা ৯৭.৩ শতাংশ কমে যায়। পর্যটনশিল্পের এই ধসের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে এটা মনে রাখা উচিত যে পর্যটন খাত শ্রীলঙ্কার তৃতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস এবং এর ধস মানে দেশটির অর্থনীতিতে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত, বিদেশে কর্মীদের বেতন কমে যাওয়া এবং কভিড বিধি-নিষেধের কারণে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার কারণে ১০ বছরের মধ্যে রেমিট্যান্স আয় রেকর্ড পরিমাণ ৫.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে মহামারি শুরু হওয়ার আগে লঙ্কান সরকার আরেকটি ভুল করেছিল। সেটি হচ্ছে সরকার অনেক বেশি পরিমাণে কর কমিয়ে দেয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে করহার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশে নিয়ে আসে সরকার। এর মধ্যে কম রপ্তানি আয়, শেয়ারবাজারের ক্ষতি এবং অতিরিক্ত ঋণ পরিষেবা চলতি হিসাবের ঘাটতিতে যোগ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র দুই বিলিয়ন ডলার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct