সেখ রিয়াজুদ্দিন ও আজিম সেখ,বগটুই,আপনজন: গত ২১ শে মার্চ বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে প্রাণ হারায় রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু সেখ। সেই ঘটনার জেরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এলাকার ১০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রামপুরহাট থেকে দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়, সেইসাথে বাচ্চা, মহিলা সহ পুরুষের ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার করে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে । বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর লোকেদের সাথে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদেরকে বলেন, তোমাদের পরিবারের লোকের মৃত্যু হয়েছে, আমার হৃদয় পুড়েছে। যদিও জীবনের বিকল্প কখনো টাকা বা চাকরি হতে পারে না। এর পর প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এলাকার বাসিন্দাদের তরফ থেকে রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আনারুল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর জন্য ফোন করা হয়। কিন্তু পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা হয়নি। সময়মতো পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এই জন্য পুলিশের ডিজিকে ডেকে নির্দেশ দেন আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার। হয় তাকে থানায় আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হলে পুলিশ গ্রেফতার করবে। তাছাড়া বলেন, এসডিপিও, আইসি, গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী সহ যারা দায়িত্ব পালন করেনি তাদেরও কঠোর শাস্তি চাই। এই কেসটা যেন সেই ভাবে সাজানো হয়, যেন দুষ্কৃতীরা সহজেই ছাড়া না পায়। এখানে আগের খুনে অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে, এরকম যেন না হয়। অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাড়ি তৈরির জন্য দু লাখ করে টাকা এবং এককালীন ৫ লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। সেই সাথে মৃতদের পরিবারগুলিকে গ্রুপ-ডি বিভাগে চাকরি দেওয়া হবে ১০ হাজার টাকা বেতনের। পরবর্তীকালে এক বছরের মধ্যে তাহা স্থায়ীকরণ হয়ে যাবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী। এখানে কোন ইন্টারভিউ দিতে হবে না, মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় দেওয়া হবে চাকরি। আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের হাসপাতালের তথা চিকিৎসার জন্য তাদের ফ্রি চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে এক লক্ষ টাকা এবং বাকি আগুনে পুড়ে যাওয়া দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বেরিয়ে পড়তেই বিশাল পুলিশবাহিনী রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের বাড়ি যায় তাকে গ্রেফতার করতে। সেখানে মহিলা ও শিশুদের নীচের তলায় এনে গোটা বাড়ি প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় তারা। যদিও পুলিশ তাকে বাড়িতে পায়নি। ওদিকে বাড়ির বাইরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকে আনারুলের অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, আনারুলকে ফাঁসিয়েছে অনুব্রত মণ্ডল। আনারুল হোসেনের সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকে। এরই মধ্যে হেলিকপ্টারে রামপুরহাট ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যে তারাপীঠে একটি হোটেলের কাছ থেকে আনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরর জেলা তৃণমূল তাকে ব্লক তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
ছবি: সানাউল্লা মোল্লা
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct