বিবর্ণ
শংকর সাহা
_____________
সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বড়বাজারে ঢোকে অম্বরিষ।অফিসে আসার সময় একমাত্র মেয়ে তুতুন বাবার হাতটি ধরে বলেছিল ফেরার পথে যেন রং আর সাথে পিচকারি নিয়ে আসে। তাই মেয়ের আবদার রাখতেই আজ বাজারে গেছে অম্বরিষ। কাল যে হোলি। বেশ কিছুদোকান ঘুরে একটি দোকান থেকে রং আর সাথে পিচকারি নিয়ে হেঁটে ফুটপাত ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে। বসন্তের বিকেলটা আজ যে তার বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে। ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাত অম্বরিষের নজরে আসে ফুটপাতের ধারে একটি বাচ্চা ছেলে হাতে ভিক্ষের থালা নিয়ে বসে আছে। অম্বরিষ সামনে এগিয়ে যায়। কাছে যেতেই সে দেখে, “ ছেলেটির বয়স যেন তুতুনের মতো। ঠিক যেন পাঁচ ছয় বছর প্রায়। পাশে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে একটি মহিলা। মনে হয় এর মা!!”সে তার নাম জ্ঞিজ্ঞাসা করে। উত্তরে ছেলেটি শুধু অর্ধস্ফূট স্বরে একটি কথায় বলে, “ বাবু,মাকে বাঁচান”। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকেদের কাছে সে জানতে পারে, ছেলেটির নাম গুডু,তার মার দুটো কিডনিই বিকলাঙ্গ।এমন করেই মা আর ছেলের দিনচলে।“
অম্বরিষের মায়া হলো। বিলম্ব না করে পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে তার মার হাতে দিয়ে বলে, “ এই টাকাটি রাখুন। পরে যদি প্রয়োজন হয় আমার বাড়িতে ওকে একটু পাঠিয়ে দেবেন।“
বাড়িতে এসে সোজা ঘরে ঢোকে অম্বরীষ। অফিসের ব্যাগটি নামিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে সে। হঠাত তার নজরে পড়ে আলমারির সেলফে সারি সারি সাজানো তুতুনের দামি দামি কত খেলনা।মনে পড়ে গুডুর কথা। এতো টুকু একটি ছেলে...
পাশ থেকে হঠাত তুতুন ডেকে বলে, “ বাবা, আমার জন্যে রং এনেছো?”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct