স্বীকৃতির নেপথ্যে এবং মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়
_________________________
বাংলা ভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আজ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু বিশ্বের দরবার থেকে বাংলা ও বাঙালিকে কেন এই সম্মান এবং বাঙালি কতটা এর মর্যাদা রাখতে পেরেছে ?
উর্দূকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের পাঁচজন বীর বাঙালি রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এবং শফিউর-এর আত্মবলিদান এবং তারপরেও লাগাতর আন্দোলনে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দূর সাথে বাংলাকেও পাকিস্তানের আরেকটি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিল।এরপর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হলে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ভাষা দিবসের মর্যাদা দিল।দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা হল।এরপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো তাদের প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস‘ হিসাবে স্বীকৃতি দিল।এই রায়কেপাকিস্তানও সমর্থন জানিয়েছিল। তবে,বাংলা ভাষার জন্য লড়াই বাঙালির কাছে সেটাই প্রথম নয়। এর আগে ও পরে বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি একাধিকবার এবং একাধিক জায়গায় লড়াই করেছে। এ’ব্যাপারে আলোকপাত করতে গেলে একটু পিছিয়ে তাকাতে হবে বঙ্গভঙ্গের দিকে। স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিদ্বজনদের চাপে ব্রিটিশ প্রশাসন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত রদ করলেও বাংলাকে টুকরো করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা তারা ছাড়তে পারেনি। ফলস্বরুপ বঙ্গভঙ্গ রোধের ৬ বছর বাদে,১৯১১ সালে অবিভক্ত বাংলার পশ্চিম দিকের মানভূম জেলাকে তারা বাংলা থেকে কেটে বিহারে জুড়েছিল।এর জ্বলন্ত প্রমাণ,মানভূম অঞ্চলের ধানবাদ, ঝরিয়া, বোকারো ইত্যাদি অঞ্চলের শহরের লোক হিন্দী বললেও গ্রামের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা।আমি নিজে এই অঞ্চলের বহু গ্রামে ঘুরে এটা দেখেছি।পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের অধিকাংশ বাঙালিই জানেন না যে,বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) ধানবাদ, ঝরিয়া, বোকারো ইত্যাদি অঞ্চল আদতে ছিল বাংলারই অংশ।
১৯১১ সালে বাংলার কিছু অংশ বিহারে ঢোকার পর ঐ অঞ্চলগুলোতে হিন্দীর আধিপত্য শুরু হয়ে গেল। ১৯১২ সালে এর বিরুদ্ধে বাঙালিরা আন্দোলন শুরু করলেন। সঠিক বিচার করলে,বাংলা ভাষার জন্য সেটাই প্রথম আন্দোলন।বিহারে বাংলাকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা ব্রিটিশ আমলে ক্ষীণ থাকলেও স্বাধীনতার পর তা’ খুব বেড়ে গেল। এর বিরদ্ধে ১৯৪৮ সালে শুরু হল জোরালো আন্দোলন।বাঙালি প্রধান মানভূম এবং পূর্ণিয়া জেলাকে বাংলায় ঢোকানোর দাবিতে বৈদ্যনাথ ভৌমিক ১৯৫৩ সালে ২২ দিনের অনশন করলেন। আন্দোলন চলতে থাকল। ফল কিছুটা হল। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর ভারত সরকার মানভূম জেলার পুরুলিয়া অংশকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকিয়ে দিল।পূর্ণিয়া পূর্ববত বিহারেই রইল। পুরুলিয়ায় বাংলা প্রাধান্য পেলেও বিহারে থাকা অঞ্চলে বাংলা পিছিয়েই রইল।এরপর ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর বিহার ভেঙ্গে”ঝাড়খণ্ড” রাজ্য সৃষ্টি হলে অনেক বাংলাভাষী অঞ্চল ঝাড়খণ্ডে পড়ল।সঙ্গত কারণেই হিন্দীর সাথে বাংলাকেও রাজ্যের সরকারি ভাষা করার দাবী উঠল।কিন্তু ২২ অক্টোবর ২০১১ সালে বিল পাশ হল,ঝাড়খণ্ডের প্রথম সরকারি ভাষা হিন্দী এবং দ্বিতীয় উর্দু।কিন্তু সেখানকার বাঙালিদের ক্রমাগত চাপের ফলে প্রশাসন ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাকেও ঝাড়খণ্ডের আরেকটি সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিল।এটা প্রমাণ করে যে,আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পরও মাতৃভাষার জন্য বাঙালির লড়াই থেমে যায়নি অর্থাৎ স্বীকৃতির মর্যাদা তারা রেখেছে। এবারে বাংলার পূর্ব অংশের দিকে তাকানো যাক। সারা ভারত পরাধীন হয়ে গেলেও অসম রাজ্যকে ব্রিটিশ নিজেদের আয়ত্তে নিতে পেরেছিল ১৮২৪ সালে। সে সময় বাংলার পূর্ব দিকের কিছু অংশ এবং অসমকে
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct