শীত সকালের খেজুর রস
এস ডি সুব্রত
___________________
বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতিতে দেখা দেয় ভিন্ন আবহ। একেক ঋতু তাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে ধরা দেয় আমাদের মাঝে। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীতের প্রভাব একটু বেশীই লক্ষ্য করা যায়। শীত মানে কুয়াশা ভেজা সকাল, শীত মানে গরম কাপড় গায়ে দেওয়া। শীত মানেই তাড়াতাড়ি লেপ কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমোতে যাওয়া। শীত এলেই এক সময় গ্রামে দেখা যেত আগুন পোহানোর দৃশ্য। এখনও আছে, তবে আগের মতো দেখা যায় না। কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে প্রকৃতিতে আসে শীত। তবে শীত এলে পিঠা পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় যেন। আর শীত মানেই ঘরে ঘরে বাহারি পিঠা-পুলির আয়োজন। খেজুর রসে ভেজানো পিঠা, ধুপি পিঠা, চিতই পিঠা, তেলে ভাঁজা পিঠা ও খেজুরের রসের পায়েশ। শীতের বিভিন্ন পিঠার মধ্যে খেজুরের রসের পায়েশ অন্যতম। সকালের কাঁচা রস থেকে যে পায়েশ রান্না করা হয় তার জুড়ি মেলা ভার। উত্তরের জেলাগুলোর প্রকৃতিতে বইছে শীতের দাপট। ভোরের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতি শীতের জানান দিচ্ছে। সেই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যাচ্ছে উত্তরের গাছিদের। শীত এলেই গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এই খেজুর গাছকে কেন্দ্র করেই। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করে। তাছাড়া খেজুরের রসের তৈরি পিঠা-পুলি আর পায়েস যেন শীতকে করে তোলে আরো পরিপূর্ণ।
ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করে নোলন স্থাপন করা হয়। এরপরই গাছে লাগানো হয় মাটির পাতিল। তার পরেই শুরু হয় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এইভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়। এতে সংগৃহীত রসে গাঁজন বন্ধ হয়। শীত যত বেশি খেজুরের রস তত বেশি মিষ্টি। শীত ও খেজুরের রস যেনও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। রস হচ্ছে খেজুরের গাছ থেকে আহুত মুখোরোচক পানীয়। সকালবেলার ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেনও অমৃত। কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার মজাই আলাদা। বাংলা আশ্বিন মাস থেকে সাধারণত রস সংগ্রহ শুরু। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়, কারণ এই দুই মাসে শীতের প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া যত ঠান্ডা থাকে রসও তত বেশি পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে আর রসও কমতে থাকে। কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করেন গাছিরা। প্রতিদিন বিকালে ছোট-বড় কলসি গাছে বাঁধা হয়, আর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন।’
কবি বেগম সুফিয়া কামাল শীত সকালে পিঠা খাওয়ার মজা বর্ননা করেছেন এভাবে......
“পৌষ পার্বণে পিঠে খেতে বসে
খুশিতে বিষম খেয়ে।
বড় উল্লাস বাড়িয়াছে মনে
মায়ের বকুনি খেয়ে।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct