আপনজন ডেস্ক: প্রতিটি শিশুর জন্য মা হলো বটবৃক্ষের মতো। মায়ের অফুরন্ত স্নেহ ও ভালোবাসায় শিশুরা নিরাপদে বেড়ে ওঠে। তাই সবার আগে গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকে নজর রাখতে হবে।একজন গর্ভবতী মাকে নিজের স্বাস্থ্য ও তার গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হয় বলে গর্ভবতী মায়েদের একটি আদর্শ খাবার রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উচিত বলে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।গর্ভকালীন সময়ে মায়ের ৭-১১ কেজি ওজন বৃদ্ধি পায়। প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় প্রসূতি মায়ের খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বিশেষ করে পাঁচ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হওয়া চাই সুষম। সঙ্গে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত জল যাতে থাকে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে যেন পর্যাপ্ত শক্তি থাকে ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও যেন ঠিক থাকে এজন্য প্রথম থেকেই একটা আদর্শ খাবার রুটিন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। একটি আদর্শ খাবার তালিকা কেমন হবে তা বোঝার আগে জানা উচিত এই সময়ে মায়েদের কী কী খাওয়া উচিত এবং কী খাওয়া উচিত নয়।
১. ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়াম নামের খনিজ উপাদানটি শিশুর হাড়ের গঠনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। মা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না খান তবে শিশুর হাড় শক্ত হবে না। এছাড়াও স্নায়ু, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও ক্যালসিয়াম দরকার হয়। এমনকি ক্যালসিয়ামের অভাবে গর্ভাবস্থায় মায়ের কোমর ও পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে। তাই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারগুলো বেশি করে খাওয়া উচিত। যেমন দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, পুদিনা পাতা, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, মায়ের যদি হাই প্রেশার থাকে তবে দুধ না খেয়ে তাকে দই খেতে হবে। এরপরও ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মাকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হয়।
২. আয়রন: শরীর সুস্থ রাখতে আয়রন কতটা প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে আয়রনের অভাব দেখা যায়। আয়রনই শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। গর্ভবস্তায় শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। অনেক শিশুর জন্মের পর থেকেই হিমোগ্লোবিনের অভাব বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় আয়রনের ঘাটতির কারণে। তাই গর্ভাবস্থায় মাকে প্রচুর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কচু শাক, লাল শাক, পালং শাক, কাঁচা কলা, বিটস, বাদাম, ছোলা, খেজুর, মাগুর মাছ ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
৩. আয়োডিন: আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও বিষয়টিকে আমরা কমই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আয়োডিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও শারীরিক বৃদ্ধি বা গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। গর্ভবতী অবস্থায় যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন না খাওয়া হলে সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অথবা হরমোন সমস্যা জন্ম হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়া জরুরি। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, দুধ, দই, পনির, ডিম, কলা ও কলার মোচা ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর আয়োডিন।
৪. ভিটামিন: ভিটামিনের অভাবে শরীরে নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি হীনতা হতে পারে। ভিটামিন এ চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ভিটামিন ডি-র অভাবে শিশুদের হাড় ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না এবং হাড় বাঁকা হয়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি করে ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। যেমন দুধ, দই, পনির, ডিম্, সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, সকল প্রকার রঙিন ফলমূল ও শাকসবজি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct