নিজস্ব প্রতিবেদক,কলকাতা,আপনজন: করোনা বৃদ্ধির জন্য সমস্ত কিছু চালু রেখে শুধুমাত্র শিক্ষাঙ্গনে লকডাউন মানা যায় না: এসআইও
দীর্ঘদিন লকডাউন কাটিয়ে শিক্ষাঙ্গন ছন্দে ফিরেছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হলেও, রাজ্য সরকার পুনরায় ৩ জানুয়ারি থেকে সমস্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এসআইও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাঙ্গন বন্ধের এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সাবির আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, “করোনা বৃদ্ধির জন্য সমস্ত কিছু চালু রেখে প্রথমেই শিক্ষাঙ্গনে লকডাউন মানা যায় না।”
উল্লেখ্য যে, ৩ জানুয়ারি থেকে সাধারন জনজীবনে আংশিক লকডাউন চালু হলেও শিক্ষাঙ্গনে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সাবির আহমেদ আরও বলেন, “ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কমসংখ্যক পড়ুয়া নিয়ে ধাপে ধাপে পঠনপাঠন চালু রাখতে হবে।” তিনি শিক্ষাঙ্গন বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, “রাজ্য সরকার যদি শিক্ষাঙ্গন চালানোর জন্য বিকল্প কোন পন্থা ঘোষণা না করে তবে এসআইও রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।” তিনি কোভিড-বিধি মেনে শিক্ষাঙ্গন চালানোর জন্য সরকারের কাছে একগুচ্ছ পরামর্শ পেশ করেন। এসআইও যে সব দাবি তুলেছে তার মধ্যে অন্যতম হল, ১) কোভিড-১৯ এর সতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পঠনপাঠন জারি রাখতে হবে।
ক) শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা সকাল ৯ টা বা সকাল ১০ টা থেকে শুরু করে সর্বাধিক তিন ঘন্টা ক্লাসে অংশ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে, অন্য একটি ব্যাচ দুপুর ১টা থেকে অথবা ২টা থেকে শুরু করে তিন ঘন্টার জন্য উপস্থিত থাকতে পারে ( ক্লাসের সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত হবে)।
খ) মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ সেখানে একসাথে ৫০% শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে পারে। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০র অধিক সেখানে ২৫% শিক্ষার্থী একসাথে ক্লাসে যোগ দিতে পারে।
গ) শ্রেণিকক্ষে প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। শিক্ষার্থীদের একে অপরের থেকে দুই মিটার দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঘ) শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য স্কুল কর্মী যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে বা কোভিড-১৯ আক্রান্তের সম্ভবনা রয়েছে অথবা কোয়ারান্টাইনে রয়েছে তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বারা নির্ধারিত দিনের সংখ্যা অতিক্রম করেই কেবল স্কুলে আসতে পারবে।
ঙ) যে সমস্ত পড়ুয়াদের পরিবার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে তাদের বিদ্যালয় আসা থেকে বিরত রাখতে হবে।
চ) স্কুল প্রাঙ্গণ, আসবাব, স্টেশনারি, স্টাফ রুম, জলের ট্যাঙ্ক, রান্নাঘর, ক্যান্টিন, পরীক্ষাগার, গ্রন্থাগার, এবং শৌচাগারকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে প্রভৃতি।
ছ) রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যেহেতু জলবাহিত রোগের সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে তাই বিদ্যালয়ের জলের উৎস যেমন ট্যাঙ্ক এবং নলকূপ কে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
জ) প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল থার্মোমিটার, মাক্স, স্যানিটাইজার এবং সাবানের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ রাখতে হবে।
ঝ) বিদ্যালযয়ের স্টাফ রুমেও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যে জায়গাগুলিতে পানীয় জল পাওয়া যায়, হাত ধোয়া হয় সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গোল মার্ক কাটতে হবে যাতে করে কোভিড-১৯ এর নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করা যায়।
২) স্কুলছুট সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায়। এই স্কুলছুট কোভিড-১৯ ও লকডাউনের কারণে মারত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির হার রোধ করতে সরকারের উচিত আকর্ষণীয় এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্কুলছুটদের পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।
৩) ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত পড়ুয়াকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও পুরো পদ্ধতি সরলীকরণ করতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পের আয়োজন করা যেতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct