ইংরেজি নববর্ষের সূচনা
এস ডি সুব্রত
______________
সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করার রীতি চালু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি । আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। তবে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন দেশে নতুন বছরের প্রথম দিনটি পাবলিক হলিডে। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়।
এতো গেলো যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। এটা মূলত এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হতে যেখানে বছরের শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। বিশ্বের যেসকল দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার পূর্বেই নববর্ষ পালন শুরু করেছে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত এর পরে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের পরে তারা সেপ্টেম্বর মাসে তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় । কোন কোন তথ্যমতে আধুনিক বিশ্বে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করার ব্যাপারে “রিপাবলিক অফ ভেনিস” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল হতে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন ও পর্তুগাল এবং ১৫৫৯ থেকে সুইডেন ,১৫৬৪ সালে ফ্রান্স এই রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। ইসরায়েল দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। অন্যদিকে কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে নি। যেমনঃ সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। সর্বপ্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিল চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাস ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর Roamn Consul-এর ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করে নেয়া হয়। তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। জানুয়ারি মাসে নববর্ষ পালন প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে
মধ্যযুগের সময় চার্চ কর্তৃক জানুয়ারির ১ তারিখ নিয়ে শুরু হয় বিপত্তি । তখন এটাকে প্যাগানীয় এবং অখ্রিস্টান কৃষ্টি বলে প্রচার হতে থাকে ।
মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যীশুখ্রিস্টের জন্মদিনের দিন ২৫ ডিসেম্বর কিংবা পহেলা মার্চ বা ২৫ মার্চ অথবা ইস্টার সানডের দিনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিলো বছর শুরুর দিন হিসেবে। ইউরোপের কাহিনীর পরও অনিয়মিতভাবে পহেলা জানুয়ারিতে উদযাপিত হচ্ছিলো ইংরেজি নববর্ষ। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী কর্তৃক সংশোধিত “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার”ই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। সাথে সাথেই অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু প্রোট্যাস্টান্ট দেশগুলো এটা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct