জাফিরা হক,আপনজন: ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার মুসলিমরা, বলছে সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিসের (সিএসডিএস) সমীক্ষা রিপোর্ট। অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন খ্রিস্টান, শিখ, জৈনদের তুলনায় মুসলিমরা অনেক বেশি বৈষম্যের শিকার। ধর্মের নামে গণপ্রহার থেকে শুরু করে মুসলিমদের সম্পর্কে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বেড়েছে অনেক বেশি।এই সমীক্ষা আরো জানায় বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে আনা হয়েছে সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব কমেছে অনেকটাই। ২০১১ সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলিমরা বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনসংখ্যার মানুষ হয়েও বিভিন্ন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার তারা। সিএসডিএস ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট তুলে ধরে জানায়, ২০২০ সালে ৮৫৭টি কেস ফাইল হয় শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ঘৃণা বিদ্বেষ জনিত কারণে যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণের থেকেও বেশি। এই সমীক্ষা দেখানো হয় যে ৪৪শতাংশ মুসলিম বিভিন্ন বিষয়ে তার বন্ধু বা অন্যান্যদের থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন শুধু মাত্র ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য। যেখানে খ্রিস্টানদের মধ্যে ১৮ শতাংশ এই বৈষম্যের শিকার।এবং শিখদের মধ্যে ৮শতাংশ। এই সিএসডিএস সংস্থা দেশের প্রায় ১৮টি রাজ্যের উপর সমীক্ষা চালিয়ে তৈরি করে এই রিপোর্ট। অথচ এই সমস্ত রাজ্যগুলির বেশির ভাগেই দীর্ঘদিন ধরেই সহাবস্থান করছে হিন্দু, মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন।
গত পাঁচ বছরে ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থান নিয়ে জার্মানির কেএএসআর-এর সহযোগিতায় তৈরি এই সংস্থার সমীক্ষা আরো জানায়, ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে তাদের ধর্মীয় আচারবিধি পালন। বিশেষত মুসলিম যুব সমাজের মধ্যে কমেছে মসজিদ, মাদ্রাসায় যাওয়ার প্রবণতা, কমেছে শুক্র বারের বিশেষ প্রার্থনায় যোগদানের সংখ্যা। সমীক্ষায় দেখানো হয় মুসলিমদের মধ্যে যেখানে ২০১৬ তে ৮৫শতাংশ মুসলিম তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করত। কিন্তু ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭৯ শতাংশ। অন্য দিকে খ্রিস্টানদের ধৰ্মীয় উপাসনালয়ে যাওয়ার সংখ্যা ৯২থেকে ৮৮শতাংশ হয়। শিখদের ৯৭ থেকে হয়েছে ৯৬শতাংশ, আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাওয়ার হার ৯২ থেকে হয়েছে ৮৮শতাংশ। যদিও এই সমীক্ষা বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের মতে অল্প সংখ্যক শহুরে মানুষের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই রিপোর্ট, এটাকে যথাযথ বলা যাবে না। আবার অনেকেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যে ভাবে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য বেড়েই চলেছে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct