আপনজন ডেস্ক: সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ আল আশীন মিশন নজির সৃষ্টি করে আসছে। এবার রাজ্য সিভিল সার্ভিসে অল আমীন মিশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখল। গত ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ডব্লিউবিসিএস (গ্রুপ সি)-এর চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে আল-আমীনের দুই পড়ুয়ার জয়েন্ট বিডিও পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছেন। ফলে, আল আমীন মিশনের ধারাবহিক সাফল্যের পালকে আরও একটি মুকুট যোগ হল।
উল্ল্যেখ, আশিরদশক থেকে রাজ্যে বিশেষত সংখ্যালঘু ছেরেমেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে আল আমীন মিশন এক উল্লেখজনক ভূমিকা নিয়ে আসছে। রাজ্যে শিক্ষা মানচিত্রের আল আমীন মিশনকে বিশেষ স্থান করে দিতে মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম যে পরিশ্রম ও সাধনা করে আসছেন তার ফলও মিলছে। রাজ্যের মধ্যে সংখ্যালঘু সমাজে কায়িক পরিশ্রমী পরিবারের ছেলেমেয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক মেধাচর্চার বিকাশ ঘটিয়ে এক নজির সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি। তবে,শুধু শ্রমজীবী পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার করা নয়, শিক্ষক অধ্যাপক গবেষক এবং বিশেষকরে সরকারি অফিসার হওয়ার প্রক্রিয়াও মিশন নিবেদিত প্রাণ। তাই, এম নুরুল ইসলামের স্বপ্নের মিশনের অধীনস্ত আল আমীন মিশন স্টাডি সার্কেল-এ ডব্লিউবিসিএস এবং পিএসসি-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধারাবাহিক কোচিং ও অনুশীলন করানো হয়। তাতেই সরকারি আমলা হওয়ার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সদ্য প্রকাশিত ডব্লিউবিসিএস (গ্রুপ সি)-এর চূড়ান্ত ফলাফলই তার প্রমাণ।
আল-আমীনের দুই পড়ুয়ার জয়েন্ট বিডিও পদে সুযোগ পান যাদের মধ্যে অন্যতম হাবিল আনসারি। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া থানার চোয়া গ্রামে। বাবা আবদুল হামিদ আনসারি ও তাঁর স্ত্রী শুবরতন বিবি পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যার বড় সংসার চালাতে হিমশিম। নিজেরা নিরক্ষর হলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় তারা বরাবরই বেশ সচেষ্ট। তাদেরই সন্তান হাবিল আনসারি জয়েন্ট বিডিও হওয়ায় তাদের পরিবার ও এলাকায় খুশির হাওয়া। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে ২০০৯-এ মাধ্যমিকে ৮১% এবং আল-আমীন মিশনের মালদা শাখা থেকে ২০১১-এ উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৩% নম্বর পান হাবিল। এরপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেন বি.ই.। সরকারি অফিসার হওয়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আল-আমীন মিশন অ্যাকাডেমি বারুইপুর শাখায় ডব্লিউবিসিএসের কোচিং নেওয়া শুরু। দীর্ঘ বেশ কয়েকবছরের লড়াইয়ের ফল তাঁর এই সাফল্য। কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানান, মিশনের আবাসিক কোচিং না হলে তার পক্ষে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হত না।
উল্লেখ্য, হাবিল বর্তমানে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনে সাব ওভারসিয়ার পদে কর্মরত।
ডব্লিউবিসিএস (গ্রুপ সি) গ্রুপে সফল হয়ে হয়ে জয়েন্ট বিডিও হচ্ছেন আল আমীন মিশন স্টাডি সার্কেল-এর আর এক কৃতী সেলিম জাহাঙ্গির। মালদা জেলার পারবৈদ্যনাথ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মহ. আজিজুর রহমান ও তার স্ত্রী জমাহার বিবির অক্লান্ত খাটুনিতেই চলে তাদের বড় পরিবার। এই পরিবারেরই মেধাবী সন্তান মহ. সেলিম জাহাঙ্গীর। ২০০৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর গণিতে স্নাতক ২০১৩ সালে। সরকারি চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে শুরু করেন। ২০১৭-এ ডব্লিউবিসিএস-এর ইন্টারভিউয়ে সাফল্য না এলেও আরও বেশি পরিশ্রমে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। এই সময় ২০১৮ সালের মার্চে আল-আমীনের আবাসিক ডব্লিউবিসিএস কোচিংয়ে ভর্তি হন। শুরু হয় তার সাফল্যের যাত্রা। ২০১৮ সালের ডব্লিউবিসিএস (গ্রুপ ডি)–এ সফল হয়ে ইনস্পেক্টর অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ পদে বর্তমানে মুর্শিদাবাদে কর্মরত। জয়েন্ট বিডিও হওয়ার খবর শুনে সেলিম জাহাঙ্গীর জানায় তার লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আই এ এস হওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য। আল-আমীনের প্রতি কৃতজ্ঞ জানিয়ে সেলিম জাহাঙ্গিরবলেন, খুবই কঠিন সময়ে মিশন কর্তৃপক্ষ নামমাত্র ফিজে তাঁকে হোস্টেলে কোচিং-এর সুযোগ না দিলে, তার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব হত না। দুই ছাত্র হাবিল ও সেলিম জাহাঙ্গীর-এর জয়েন্ট বিডিও হওয়ার খবরে এম নুরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট সবাইকে মুবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিউ টাউনে নির্মীয়মান ‘আল-আমীন মিশন ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’-এর নির্মাণ শেষ হলে এখানে বড় পরিসরে সিভিল সার্ভিসের আবাসিক কোচিং শুরু হবে। আল-আমীন মিশন স্টাডি সার্কেল-এর ডিরেক্টর দিলদার হোসেনও এই সাফল্যে খুশি। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি বেশি সাফল্যের জন্য মিশনের ডব্লিউবিসিএস কোচিংয়ের পরিকাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct