২৯টা বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনও ৬ ডিসেম্বর এলেই
বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে চর্চা অব্যাহত থাকে। বর্তমানে তার অস্তিত্ব থাক বা না থাক বাবারি ধ্বংসের স্মৃতি কিন্তুএখনও দেশের মানুষ মন থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি। তাই এই দিনটি এলেই দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও ফের চর্চিত বিষয় করে তোলে বাবরি মসজিদ রামমন্দির প্রসঙ্গ। রামমন্দির তৈরি কিংবা বাবরি ধ্বংসের বিষয় নিয়ে হয়তো আলোচনা অবিরাম চলতেই থাকবে। সেই স্মৃতি রোমন্থন করেছেন আব্দুস সামাদ মণ্ডল। আজ শেষ কিস্তি।
৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে
‘বাবরি মসজিদ’ ধ্বংসের পরেই
হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যায় একে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসায়।
সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের গণহত্যা রুখতে ঐ বছরে ১৬ ডিসেম্বরে ‘লিব্রাহান কমিশন’ গঠন করা হয়।
কয়েক বছর পর ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্টে ‘বাবরি মসজিদের’ ভূমির মালিকানার অধিকার নিয়ে শুনানি শুরু হয়।এলাহাবাদ হাইকোর্ট ‘বাবরি মসজিদের’ নিচে কোনও ভগবান রামের স্থাপত্য ছিল কিনা তা পর্যবেক্ষণ শুরু করে।
পর্যবেক্ষণের গুরুভার দায়িত্ব ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার’ উপরে প্রদান করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৩ সালের ২রা মার্চে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ ‘বাবরি মসজিদের’ নিম্নে খনন কাজ শুরু করে।
এদিকে ১৭ বছর পর ২০০৯ সালে ৩০শে জুনে ‘লিব্রাহান কমিশন’ তাদের পর্যবেক্ষণের পরে তৎকালীন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী ‘মনমোহন সিং’ এর কাছে তথ্য উপস্থাপন করে। এই কমিশন ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে বলে যে, বাবরি মসজিদের ধ্বংসের পিছনে সরাসরি এই সমস্ত ব্যাক্তি দায়ী।
২০১০ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ‘বাবরি মসজিদের’ ২.৭৭ একর জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনটি ভাগ যথা ক্রমে ‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড’, ‘রাম লাল্লা’ ও ‘নির্মোহি আখড়া’-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৭ সালে ২৫ মে এল,কে আদবানি ও উমাভারতিকে সিবিআই এর নির্দেশে ‘বাবরি মসজিদ’ ধ্বংসের মামলায় কোর্টে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়। কয়েকদিন পরে ৩০ মে-তে ‘বাবরি মসজিদ’ ধ্বংসের অভিযুক্ত দু’জনকেই মুক্তি দিয়ে দেয় আদালত।
অবশেষে ২০১৯ সালে ৯ নভেম্বরে ‘বাবরি মসজিদের’ সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশবাসী।
৫ জন বিচারকের নেতৃত্বে ‘রাম মন্দির’ স্থাপনের জন্য বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর জমি দিয়ে দেয়।
অন্য দিকে ‘উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওকফ বোর্ড’কে মসজিদ নির্মাণের জন্য রাম মন্দির থেকে ২৫ কিমি দূরে ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিমকোর্ট।
২০২০ সালে ৩০ সেপ্টেম্বরে লখনউয়ের বিশেষ আদালত ‘বাবরি মসজিদ’ ধ্বংসের সঙ্গে অভিযুক্তদের ব্যাপারে রায় শোনায়। লখনউ আদালত ৩২ জন ‘বাবরি মসজিদ’ হামালার অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছিল বিজেপি নেতা এল কে আদবানি, মুরলি মনোহর জশি, উমা ভারতি সহ আরও অনেক বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য।
আদালত ‘বাবরি মসজিদ’ হামালার অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়ে দেওয়ার পরে কোনও প্রকার বড়ো আন্দোলন চোখে পড়েনি। না কোনও সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল কিংবা অন্য কোনও সংগঠন।
বরং সকলেই মুখে কুলুপ গুজে চুপ করে আছে।(সমাপ্ত)
লেখক সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct