অমরজিত সিংহ রায়, রায়গঞ্জ: রাজ্যে একের পর এক নতুন প্রকল্প হচ্ছে। আর তাতে খরচ করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে এভাবেই মঙ্গলবার বিধায়কদের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে বেশ কয়েকবার রাগান্বিত হযে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। আর তার ফলে তিনি দলের বিধায়কদের একপ্রকার ধমকও দেন। প্রশাসনিক বৈঠকে করণদিঘির বিধায়ক গৌতম পাল নতুন কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিলে মুখ্যমন্ত্রী অর্থসঙ্কটের কথা তুলে ধরে বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধু, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড এমন জনমুখী প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তার পর যেন জনপ্রতিনিধিরা আর কোনও নতুন দাবি না করেন। যা পেয়েছেন তা দিয়ে যেন মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন তাঁরা। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের উদ্দেশ্যে বলেন, যতই দাও শুধু চাই চাই। জিতে গিয়েছেন। ভাল করে কাজ করুন। শুধু দাও দাও করলে হবে? কোথা থেকে আসবে একবারও ভেবেছেন? জানেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে কত টাকা খরচ হয়েছে? সেই টাকা আমাদের তো জোগাড় করতে হচ্ছে। ২ বছর এখন কিচ্ছু চাইবেন না। আর রেগে গিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, তোমরা ম্যাজিশিয়ন তৈরি করো। সে তোমাদের টাকা দেবে।তিনি আরও জানান, কেন্দ্র একটা টাকা দেয় না। করোনায় সব শেষ। আর্নিং নেই, শুধুই বার্নিং। আগামী ২ বছর কিচ্ছু চাইবেন না। এখন ভাল করে কাজ করুন। সব দাবি মানা সম্ভব নয়। এদিন আরও একবার মুখ্যমন্ত্রীকে রাগান্বিত হতে দেখা যায়। ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরি পৃথক ইসলামপুর জেলার দাবি তোলায় রেগে অগ্নিশর্মা হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে তাকে তার সমস্যার কথা জানাতে বলায়, করিম চৌধুরি নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তখন সংক্ষেপে ‘এক সেকেন্ডে, এক মিনিট ‘ তার বক্তব্য রাখার জন্য বলেন। তখনই করিম চৌধুরি ইসলামপুরকে পৃথক জেলা করারর দাবি জানান। আর তাতে মুখ্যমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন, ‘এরকম দাবি মিটিংয়ে করা উচিত নয়। ঠিক আছে! এরকম হয় না। বসুন। বসুন। এসব চিপ কথাবার্তা বলবেন না। তার কারণ আপনার এটুকু একটা ছোটো জেলা। তাতে দুটি মহকুমা আছে। ইসলামপুর মহকুমা আছে ইতিমধ্যে। ইসলামপুর পুলিশ জেলা আছে। অফিসার কোথা থেকে পাবেন? অফিসার পেলে তবে তো হবে!। একটা জেলা করতে অনেক কাজ করতে হয়। কোথা থেকে পাবেন? আপনার কি প্রবলেম আছে? রায়গঞ্জ থেকে ইসলামপুরের দূরত্ব কতটুকু! আপনি দেখেছেন যে সুন্দরবন এবং মুর্শিদাবাদ কত বড় জেলা। জিতে গিয়েছেন, এখন ভালো করে কাজ করুন। ওসব হবে না এখন।’মমতা এতটাই রেগে যান যে তিনি বাধ্য হয়ে বলেন, ‘তাহলে কিন্তু আমি বিধায়কদের বলতে দেব না। বিধায়করা যদি মনে করেন, নিজেদের মতো চিপ কথাবার্তা বলবেন, আমি তাহলে বিধায়কদের কথা বলার অনুমতি দেব না। আই অ্যাম সরি (আমরা দুঃখিত)। কারণ সবকিছু করে দেওয়া হচ্ছে। আমি এটা নেবই না। ইফ দাবি ইজ জেনুইন (দাবি যদি যথার্থ হয়), তাহলেই করব। নাহলে করব না। ওইটুকুখানি জেলা। এবার বলবে আমার ঘরের মধ্যে জেলা করে দিন।’ এদিন বিধায়কদের দাবি দাওয়া শোনার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে রাজ্যের সব মেয়াদউত্তীর্ণ পুরসভার ভোট করে দেওয়া হবে। গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্র কথার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। উল্লেখ্য, পুরনিগম ও পুরসভা নিয়ে রাজ্যের ১২১ টির মেয়াদ ফুরিয়েছে। এখনও পর্যন্ত শুধু কলকাতা পুরনিগমের ভোটের দিন ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct