বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে নজিরবিহীন মোড়, হুলিয়া জারি প্রধানের নামে,অস্বস্তিতে শাসক দল
নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে বন্যা ত্রানের ৭৬ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে বঞ্চিত উপভোক্তারা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হতেই নড়েচড়ে বসে ব্লক প্রসাশন। প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিও থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও অধরা থেকে যায় প্রধান।এবার বন্যা ত্রাণের কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন মোড় হরিশ্চন্দ্রপুরে।সরাসরি শাসক দলের প্রধানের নামে হুলিয়া জারি করল আদালত। অস্বস্তিতে শাসক দল।দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ বন্যাত্রানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এফআইআর হলেও শাসকদলের প্রধানকে ধরতে পারেনি পুলিশ।দুমাস বাদেও প্রধান ধরা না পড়ায় এবার তাকে ধরতে হুলিয়া জারি করল আদালত।সোমবার আদালতের ওই নির্দেশ ফেরার প্রধানের বাড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছে পুলিশ।মালদহের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা।
জানা যায় ২০১৭ সালে বন্যাত্রাণের টাকা লুঠের অভিযোগ ওঠে প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রশাসন গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তারপর আদালত সক্রিয় হতেই দুমাস আগে প্রধান সোনামনি সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর করে প্রশাসন। ঘটনায় অভিযোগে তদন্তের পর তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর করল প্রশাসন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। তদন্তে বন্যাত্রানের ৭৬ লক্ষ টাকা লুঠ হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের মতো জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা হতেই গা ঢাকা দেন প্রধান। কিন্তু প্রধানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়। তারপরেই আদালত প্রধানের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে।
একমাসের মধ্যে প্রধান ধরা না দিলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। হুলিয়া জারির পাশাপাশি ফেরার প্রধানের বাড়ির সামনে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে শাসকদলের প্রধানের হুলিয়া জারি হতেই শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে জোর তরজা শুরু হয়েছে। তবে শুধু প্রধান নন। বন্যাত্রাণের টাকা লুঠের অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সভাপতি কোয়েল দাসও এখনও অধরা। তার খোঁজ না মেলায় তার বিরুদ্ধেও প্রধানের মতোই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, প্রধানকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমরা আদালতকে জানাই। তারপরেই আদালত ফেরার প্রধানের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করার নির্দেশ দেয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তেমন হলে তার বিষয়টিও আমরা আদালতকে জানাব।
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে মহকুমাজুড়ে ভয়াবহ বন্যায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৩৩০০ টাকা ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। বরুইয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন ৭৩৯৪ জন। কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেও তারা টাকা পাননি বলে দুর্গতদের অনেকেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে, তালিকায় দুর্গতদের নাম থাকলেও তাদের নামের পাশে অন্য একাউন্ট দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। প্রশাসন পদক্ষেপ না করায় মামলা করেন পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, দুর্গতদের টাকা লুঠ করা হয়েছে। মামলার জন্যই প্রশাসন তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করা হয়েছে। আদালতের উপরে আমাদের ভরসা আছে
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন,দল দুর্নীতি সমর্থন করে না। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে আলাদা করে বলার কিছু নেই। আইন আইনের পথেই চলবে।
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সভাপতি কোয়েল দাসও এখনও অধরা। তার খোঁজ না মেলায় তার বিরুদ্ধেও প্রধানের মতোই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: