আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার সীমান্তে বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে চলেছে বিধানসভায়। পাঞ্জাবের পর পশ্চিমবঙ্গই হবে দ্বিতীয় রাজ্য যারা এই ধরনের প্রস্তাব আনতে চলেছে। যদিও শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অনুপ্রবেশ ও সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার গত মাসে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আগের পরিধি বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করেছে। বিএসএফ আইন সংশোধন করার ফলে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই অনুসন্ধান, বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেপ্তার অবাধে করতে পারবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার উভয়ই এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।
পাঞ্জাবে মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ চান্নির মতোই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন এবং অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেছেন। কারণ তাঁর মতে, এটি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, শুক্রবার কোচবিহারের সিতাবিএসএফের গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয় ও অপর ২ জন বাংলাদেশি নাগরিক ৷ ভারতীয় নাগরিক সিতাই এর বাসিন্দা। সিতাই থানার তরফে জানানো হয়েছে ভারতীয় নাগরিকের নাম প্রকাশ বর্মন।
বিধানসভায় এ নিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি মুখ খোলেন। বিধানসভার বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির বৈঠকের পর তিনি বলেন, কোচবিহারের সিতাইতে কি ঘটেছে দেখুন। ‘আইনশৃঙ্খলা’ একটি রাজ্যের বিষয়। এটা বিএসএফ আইনে নেই। পুলিশ ও বিএসএফ-এর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবে। তাই তিনি বলেন, আমরা ১৮৫ বিধির অধীনে বিধানসভার মধ্যে আলোচনা করব এবং বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানো বাতিলের দাবি জানাব। এদিন বিধানসভায় কোচবিহারের দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বিধানসভাতে বলেন, এটা রাজ্যের এক্তিয়ারে হাত দেওয়ার প্রচেষ্টা।
তিনি অভিযোগ করেন, চোরাচালানকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের সাথে বিএসএফ হাত মিলিয়ে আছে। কোচবিহার সীমান্তে বেড়া রয়েছে। তা নিরাপদ এবং অতিক্রম করা কঠিন।
বিএসএফ প্রতিবার এক ঘন্টার জন্য কেবল তিনবার গেট খোলে। এখন এই অবস্থায় অনুপ্রবেশকারীরা কীভাবে তাদের সাহায্য ছাড়া প্রবেশ করতে পারে সেই প্রশ্ন তোলেন উদয়নবাবু। তাই তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা না করে প্রথমে তার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা।
অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, রাজ্য সরকারের কেন্দ্রকে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে তারা এমএইচএ-র পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজি নয় এবং যার জন্য একটি বিধানসভা প্রস্তাবের খুব প্রয়োজন। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মানুষ বি এস এফ-এর বর্ধিত শক্তিতে নিরাপদ বোধ করবেন না।
উল্লেখ্য, কোনও অনুমতি ছাড়াই সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে কাউকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা পাওয়ায় বিএসএফ এবার বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ২২১৬ কিলোমিটার জুড়ে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। যে সমস্ত সীমান্তবর্তী জেলা এর আওতায় পড়বে সেগুলি হল কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও কলকাতার কিয়দাংশ (উত্তর কলকাতা)। উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর বসিরহাট কলকাতা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ ৫০ কিলোমিটার নিয়ম অনুযায়ী, এখন কলকাতার নাকের ডগায় এসে ব্যবস্থা নিতে পারবে বিএসএফ। সীমানা পরিবর্তনের আওতায় পড়ে যাবে উত্তর কলকাতার বেশ কিছু এলাকাও, যেখানে রাজ্য পুলিশ কিংবা কলকাতা পুলিশের ক্ষমতা খর্ব হয়ে থাকবে। তবে রাজ্যের সীমান্তবর্তী যে নয়টি জেলায় বিএসএফ ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার পেয়েছে, সেখানে ১৪৮টি বিধানসভা আসন এবং ২৩টি লোকসভা আসন আওতায় এসে যাবে। এর ফলে রাজ্যের মোট ২৯৪ সদস্যের বিধানসভা আসনের অর্ধেকের বেশি এলাকা বিএসএফ অনুমতি ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে। একই ভাবে ২৩টি লোকসভা আসনও বিএসএফের শাসনে চলে আসবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে ১৪৮টি বিধানসভা এলাকা সীমানা পরিবর্তনের ফলে বিএএসএফ বিনা অনুমতিতে গ্রেফতারের ক্ষমতা পেয়েছে তার বেশিরভাগটাই তৃণমূলের দখলে। সেখানে বিজেপি একেবারেই কোণঠাসা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct