এম মেহেদী সানি, হাবড়া: এলাকায় পরিচিত হওয়ার কথা ছিল কোন একটি স্কুলের শিক্ষিকা বা কোনো একটি কলেজের অধ্যাপিকা কিংবা সরকারি কোনো স্টাফ হিসেবে ৷ যোগ্যতাও কিছুতে কম ছিল না, ইংরেজিতে ৬১ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তরে ফার্স্টক্লাস ৷ বাবা মায়ের আশা ছিল তেমনটি তাই চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছেন একাধিক ৷ চাকরির আশায় বসে না থেকে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে, বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে হাবড়ার তরুণী টুকটুকি দাস বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পথ। বছর ছাব্বিশের ওই তরুণী উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শেষমেশ চায়ের দোকান দিলেন ৷ সোমবার উদ্বোধন হওয়া টুকটুকির ওই দোকানের নাম দিয়েছেন ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ ৷ দোকানের নামই শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিচয় বহনকারী, যা দেখে হতবাক নিত্যযাত্রীরা ৷ যদিও টুকটুকির ইচ্ছে চায়ের দোকানটাকে দাঁড় করিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করবে। নিজের পরিচিতি গড়ে তুলবে। তাঁর অনুপ্রেরণা ইউটিউবের মাধ্যমে খোঁজ পাওয়া মুম্বইয়ের এক চায়ের দোকান। যেটি তৈরি করেছেন উচ্চশিক্ষিত এক যুবক । আর সেখানেও দোকানের নামকরণ করা হয়েছে ওই যুবকের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে জুড়ে দিয়ে ৷ যেটা মনে ধরে টুকটুকির, তার পরেই এমন সিদ্ধান্ত ৷ টুকটুকির এই সিদ্ধান্তে প্রথমে আপত্তি জানান তাঁর বাবা-মা, বিষয়টি বুঝে পরে অবশ্য মত দেন বাবা-মা ৷
টুকটুকির বাড়িতে রয়েছে মুদির দোকান, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ভ্যানরিকশাও চালান বাবা প্রশান্ত ৷ সবকিছু স্বভাবিক করতে কিছু করার ইচ্ছা ছিল টুকটুকি’র। হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে ইংরেজি নিয়ে পাস করে এমএ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও চাকরি না পেয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে সম্মানজনক উপায়ে যে উপার্জন করা যায় আবারো তা প্রমাণ করলো টুকটুকি ৷ তাঁর কথায় “আমি মনে করি, কোনও কাজই ছোটো নয়।” পাশাপাশি দোকানের নামটি যখন সকলের কাছে প্রশ্নচিহ্ন তখন টুকটুকির কথা অনুযায়ী “দোকানের নামে নতুনত্ব রাখতে চেয়েছি। শিক্ষিত হয়েও যে কোনও কাজে এগিয়ে আসা যায়, সেই বার্তাও হয়তো আছে এই নামে।” আপাতত সকলের মুখে মুখে ঘুরছে টুকটুকির ‘এম এ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ নাম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct