রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ: নুন আনতে পান্তা ফোরানোর অবস্থা। ভাঙা চোরা টালির বাড়ি। সাইকেলে করে কাপড় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কোনোরকমে সংসার চালান মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের বনি ইসরাইল। সেই দরিদ্র পরিবারেরই দুই সন্তান এখন এমবিবিএসে পড়ার সুযোগ পাবে। সোমবার ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই যেন আনন্দের জোয়ার বাণী ইসরাইলের ফুটো চালের ঘরে। বড় ছেলে শাহিদ আনোয়ারের পর এবার মেজো ছেলে সোহেল আনোয়ারও এমবিবিএসে সুযোগ পাবে। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সোহেল আনোয়ারের র্যাঙ্ক হয়েছে ১২৫৫০। প্রাপ্ত নম্বর ৬১৬।
জানা গিয়েছে, সামসেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের পেশায় কাপড় বিক্রেতা তথা হকার বনি ইসরাইল। স্ত্রী কেশবাণু বিবি, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই সংসার। কোনরকমে হকারী করে দিন গুজরান করলেও মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতে তৎপর বনি ইসরাইল। বড় ছেলে শাহিদ আনোয়ার ইতিমধ্যেই ২০১৯ সালে নিটে সাফল্য অর্জন করে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। ছোট ছেলেকেও ডাক্তার করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দু মুঠো দুবেলা খেয়ে না খেয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করানোর পর
এলাকারই ছেলে বর্তমানে দার্জিলিং’ জেলায় কর্মরত বিডিও সামিরুল হকের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে জিডি, তারপর রহমতে আলম মিশন ও পরে আল আমিন মিশনের খলিসানি শাখায় নিটের কোচিং নিতে শুরু করে বাণী ইসরাইলের মেজো ছেলে সোহেল আনোয়ার।
অবশেষে সোমবার আসে সেই খুশির খবর। বড় ছেলের মতো আরো এক ছেলে এমবিবিএসে সুযোগ পাওয়ায় খুশিতে কার্যত চোখে জল এসেছে বাবা বাণী ইসরাইল ও মা কেশবাণু বিবির। রেজাল্ট পেয়ে উচ্ছসিত সোহেল আনোয়ার। একই পরিবার থেকে দুই ভাইয়ের ডাক্তার হওয়ার খবরে খুশি যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দারা। ভাঙা চালের নীচে বসবাস করে যেভাবে দুই ছেলেকে ডাক্তার করে তুলছেন পেসায় হকার বনিইসরাইল, তাকে সাবাস জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সোহেল আনোয়ারকে সংবর্ধনা প্রদান করেন ছাত্র সংগঠন এসআইও। সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসআইও’র জেলা সম্পাদক জহিরুল হক, অঞ্চল সভাপতি আনোয়ার হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এবিষয়ে বাবা বাণী ইসরাইল বলেন, বড় কষ্ট করে দুমুঠো কম খেয়ে ছেলেদের পড়াশুনা করিয়েছি। আজ তারা সফলতা পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার ছেলেরা ডাক্তার হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করুক এটা আমি চাই।
অন্যদিকে সোহেল আনোয়ার জানায়, পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষের দাঁড়াতেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে জন্মেছিল। খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে। আমার বাবা মাকে স্যালুট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct