ফৈয়াজ আহমেদ: বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পাখির খামার করে বেশ ভালো টাকা আয় করছেন। বিভিন্ন জাতের বিদেশী পেট পাখি গুলো মূলত খামারে পালন করা হয়। প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন ধরনের পাখি ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এছাড়াও বেশ কিছু উন্নত জাতের পাখি রয়েছে যেগুলো বাজারে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। এসব দিক বিবেচনায় রেখে পাখির খামার করে আয় করাটা খুব বেশি কঠিন বিষয় নয়। তবে পাখির খামার করে আয় করতে চাইলে এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন কিংবা বড় কোনো খানা এর সাথে যোগাযোগ রাখা বা লিংক আপ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাখির খামার করতে চাইলে সাধারণত এটি দুই ভাবে করা যায় প্রথমটি হচ্ছে খাঁচার ভিতর পাখি পালন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে কলোনি করে পাখি পালন। মোটামুটি ৩০ বা ৪০ জোরা পাখি দিয়ে খামার শুরু করতে ৫০ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাড়িতে ছাদে অথবা ঘরের ভেতর যে কেউ পাখির খামার করতে পারেন। এখানে খামার করার মতো বেশ কয়েকটি পাখির জাত বলা হল বাজরিগার লাভ বার্ড ককটেল কাকাতোয়া টিয়া এবং এগুলো ছাড়াও কবুতর তো আছেই। (APONZONE TV)
লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, বাজরিগার, ডাভ, ককাটেইলসহ বিভিন্ন রকম বিদেশী পাখি এখন পশ্চিমবঙ্গে সহজলভ্য। এসব পাখি পালন অনেকেরই বাড়তি আয়ের উৎস। পড়াশোনার পাশাপশি বিদেশী পাখি পালন করে অনেক ছাত্রছাত্রী হাত খরচের টাকা যোগাড় করছেন। কিছুদিন আগে যা ভাবাও যেত না। এই সব বিদেশী পাখি পশ্চিমবঙ্গে ডিম বাচ্চা করছে। নানা রকম মিউটেশন বের হচ্ছে। পড়াশোনর পাশাপশি ফিঞ্চ, লাভবার্ড, বাজরিগার পালন করতে পারে। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয় না। বরং ছাত্রদের জন্য ভাল। পাখি পালন খারাপ কাজ থেকে বাঁচায়। আয়ের পথ প্রশস্ত করে।
লাভবার্ড: শরীল জুড়ে তার নানা রং। বাকানো ঠোট, স্বচ্ছ চোখ, মায়াবি চাওনি, এক অপরকে খাইয়ে দেয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য লাভ বার্ডের। লাভ বার্ডের আদি নিবাস আফ্রিকা। লাভ বার্ড বিভিন্ন প্রজাতির। লুটিনো পিচ ফেস, পিচ ফেস রোজী, হোয়াইট ফেস ভায়োলেট, ইয়েলো ফিসার, লাইম ফিসার, অলিভ ফিসার ইত্যাদি প্রজাতির লাভ বার্ড বাংলাদেশে পাওয়া যায়। প্রজাতি ভেদে দাম বিভিন্ন রকম। ৩০০০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকার লাভ বার্ড পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যায়। এক বছর লাভ বার্ডের ডিম পাড়ার উপযুক্ত সময়। ৪ থেকে ৬টিঁ ডিম পারে। সিড মিক্স লাভ বার্ড খেতে পছন্দ করে। চিনা, কাউন, ধান, সূর্যমুখীর বীজ, কুসুম ফুলের বীজ ইত্যাদি পরিমান মত মিশালে সিড মিক্স তৈরী হয়। পাখির দোকানে লাভ বার্ডের খাবার কিনতে পাওয়া যায়। শাক সবজি ফলমূল লাভ বার্ড খেয়ে থাকে। অর্থনীতিকভাবে লাভ বার্ড পালন লাভ জনক। লাভ পালনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে খুব ভালো জায়গা। লাভ বার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই পাখির অসুখ বিসুখ হয় না বললেই চলে। ছাত্রছাত্রীরা অনায়াসে দু’এক জোড়া লাভবার্ড পালন করতে পারে। হাতখরচের টাকা লাভবার্ড পালনের মাধ্যমে আসতে পারে।
বাজরিগার: বৈজ্ঞাানিক নাম মেলোপসিট্্রাকাস আনুডুলেটাস। আদি নিবাস অস্ট্্েরলিয়া। দেখতে অনেকটা টিয়া পাখির মত। তবে টিয়া পাখি না। বাজরিগার নানা প্রজাতির হয়। উল্লেখযোগ্য হল, ওয়াইল্ড গ্রিন, ইয়েলো ডাবল ফ্যাক্টর এসপাঙ্গল, গোল্ডেন ফেস ডাবল ফ্যাক্টর এসপাঙ্গল, রেইম বো বাজরিগার, ইংলিজ বাজরিগার, জাপানিজ বাজরিগার ইত্যাদি। দাম ১০০০ থেকে লক্ষাধিক টাকা। দৈর্ঘ্য ১৮, প্রস্থ ১৮, উচ্চতা ১৮ ইঞ্চি খাঁচায় এই পাখি পালন করা যায়। বাজরিগারের প্রজনন ক্ষমতা খুবই ভাল। ৬ মাস বয়সে ডিম পাড়ে। একবারে ৬ থেকে ৮টি ডিম দিতে পারে। ছেলে মেয়ে চেনা সহজ। বাজরিগারের ওজন ৩৫ থেকে ৪০ গ্্রাম হয়। লম্বা ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি। পছন্দনীয় খাবার সিড মিক্স। খুব কম খায়। পশ্চিমবঙ্গে তরুণদের কাছে বাজরিগার পাখি খুব জনপ্রিয়। এই পাখি খুব সহজেই পোষ মানে। বাজরিগার বিভিন্ন বয়সের মানুষের আনন্দের মাধ্যম হতে পারে। তরুনরা এই পাখি পালন করে নিজেদের নেশামুক্ত রাখতে পারে।
ফিঞ্চ: পাখিজগতের মধ্যে সাইজে ছোট। অনেকটা চড়–ই পাখির মতো। তবে দেখতে সুন্দর। মনকাড়া, আকর্ষণীয় যে কটি পাখি আছে তার মধ্যে অন্যতম ফিঞ্চ। ফিঞ্চের আদি নিবাস অস্ট্্েরলিয়া। ফিঞ্চের ডিম বাচ্চা করানো সহজ। পোষ মানে, অর্থনীতিকভাবে লাভজনক। পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য শিক্ষার্থী ফিঞ্চ পাখি পালন করছেন। ফিঞ্চ নানা প্রজাতির হয়। উল্লেখযোগ্য হল, ডায়মন্ড ফায়ার টেইল, লংটেল, জেব্্রা, গোল্ডিয়ান ইত্যাদি। ৬ থেকে ৯ মাসে ডিম পারার উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩ থেকে ১২টি ডিম দেয়। সিড মিক্স প্রিয় খাবার। পাশাপশি এগ ফুড, শাক সবজি খেয়ে থাকে।
ককাটিয়েল: মাথায় লম্বা ঝুটি। খুব সুরেলা কন্ঠে ডাকে। কন্ঠ এত মিষ্টি যে একে গায়ক পাখি বলা হয়। চুপচাপ স্বভাবের। মানুষের সাথে খুব সহজে মিশতে পারে। এতক্ষণ যে পাখিটির কথা বলছিলাম তার নাম ককাটিয়েল। আদি নিবাস অস্ট্্েরলিয়া। এই পাখির সবচেয়ে আকর্ষণীয় এদের মাথার ঝুটি। এরা মানুষের সঙ্গ পছন্দ করে। বিভিন্ন প্রজাতির ককাটিয়েল আছে। যেমন গ্রে, লুটিনোম, পাল, পাইড, হোয়াইট ফেস। সিড মিক্স এদের প্রিয় খাবার। প্রজনন ক্ষমতা অনেক ভাল। ১০টির মত ডিম দেয়। বাচ্চা হবার হার ও অনান্য পাখির চেয়ে ভাল। সর্বনিন্ম ৩,৫০০ হাজার টাকায় এক জোড়া ককাটিয়েল কিনতে পারা যায়। দীর্ঘদিন যাবত ককাটিয়েল পালন করছেন হাবিব। তার মতে যে কারো হাতে খানিকটা সময় থাকলে সেটা ককাটিয়েলের পিছনে লাগালে ভাল টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
বিদেশী পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
বাজরিগার, লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, ককাটেইল
ডোভ, গ্রে গ্রিন, সিনামন, টারকুইজিন,
রেড হেড, অপলাইন, টারকুইজিন,
ইলেক্টাস, ম্যাকাউ, মুলাক্কান কাকাতুয়া
কাইফ প্যারট, প্রিন্স অব ওয়েলস, চ্যাটারি লরি, লুটিনো রিন, নেক প্যারট,
আলবিনো রিন, রেড কালার লরি, সান কৌনর, রেড লরি, ভায়োলেট লেক লরি
এদের অনেকের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া,আফ্রিকা,নর্থ আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশ।
বাজারজাতকরণ
পাখির খামার এর ব্যাপারে ভাবলে সবার আগে মাথায় আসে ” বিক্রি করবো কোথায়” । এখানে এর সহজ সমাধান দেয়া হলো। পাখির খামার করে আয় করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পাখি বিক্রি। কলকাতার গালিফ স্ট্রীট, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়া, দক্ষিন ২৪ পরগনার জয়নগর ইত্যাদি, ছাড়া ইন্টারনেটে সার্চ করলেও আপনার আশেপাশে অনেক হাট পেয়ে যাবেন।
এই সবগুলো হাঁটে প্রতি সপ্তাহে প্রচুর পাখি বেচাকেনা হয়। এছাড়াও প্রতিটি জেলায় কিন্তু সাপ্তাহিক হাটে অনেক পাখি বেচাকেনা হয়। এই হাটগুলো ছাড়া আরো বেশ কিছু উপায় আপনার পাখি বিক্রি করতে পারবেন। প্রথম উপায় হচ্ছে এলাকার পাখির দোকানে বিক্রি। কিন্তু দোকানে বিক্রি করলে সমস্যা হল দাম পাবেন পাখি নর্মাল বিক্রি দামের ৫০% । এছাড়া যদি অনলাইনে পাখি বিক্রি করতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। এখনো হয়তো অনেকেই চিন্তা করবেন পাখির খামার তো অনেক মানুষ করে ! কিন্তু তারা কেন লস করছে। এর কারণ হলো তারা খামার করতে জানে না বা তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই । আসলে মূল ব্যাপার হলো পাখির খামার করা লাভজনক, কিন্তু লস খাবার কারন বিনিয়োগকারী নিজে । যদি পাখির খামার একটি লস ইনভেস্টমেন্ট হতো তবে সব খামারীরা লস করতেন কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হচ্ছে না। সুতরাং যদি সঠিকভাবে ও নিয়ম মেনে পাখির খামার করা যায় তবে অবশ্যই সেখান থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব।
বিদেশী পাখি পালন এ প্রধান প্রতিবন্ধকতা
১) পাখি খাদ্যের দাম বেশি
২) ওষুধের দাম বেশি
৩) ডিএনএ টেষ্টিং ল্যাব না থাকা
৪) পাখি পালন এর এক্সেসরিজের দাম বেশি
৫) স্পেশালিষ্ট ডক্টর নেই
যার কারণে সম্ভাবনাময় বিদেশি পাখির প্রসার কম ঘটছে। মান ভাল নয়।তারপরও প্রতিবেশী দেশগুলো পাখি রফতানি করে| রফতানি বন্ধা থাকা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে আমরা পাখি রফতানি করতে পারছিনা। চোরাই পথে অসুস্থ পাখি আসে। যা পাখি প্রেমিকদের চিন্তার কারণ এবং এটা একটা বড় বিদেশী পাখি পালন এ প্রতিবন্ধকতা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct