মঞ্জুর মোল্লা নদীয়া, গৌরাঙ্গ সেতুতে বড়সড় ফাটল,ভারী যান চলাচল বন্ধ করল প্রশাসন।নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুর মাঝখানের বেশ কিছুটা অংশ হঠাৎই বসে গিয়েছে। এরফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা দেয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। তারা প্রথম থেকে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ফলে কৃষ্ণনগর থেকে বর্ধমান যাওয়ার যোগাযোগ রক্ষাকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতু দিয়ে আপাতত কোন ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।কৃষ্ণনগর থেকে বর্ধমান বা বর্ধমান থেকে কৃষ্ণনগরে আসার জন্য বাস-লরি সহ ভারী যানবাহন কীভাবে চলাচল করবে,তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।পূর্তদফতরের ইঞ্জিনিয়াররা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে কতদিন ধরে বন্ধ রাখা হবে ওই সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল, বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার সিদ্ধান্ত জানাবেন।আপাতত হালকা যান চলাচল চালু রাখা হলেও রাখা হচ্ছে প্রশাসনিক নজরদারি।যদিও পূর্ত দফতরের নদিয়া হাইওয়ে ডিভিশন ওয়ানের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় কুমার সিং বুধবার গৌরাঙ্গ সেতু পরিদর্শন করে জানিয়েছেন,’ সেতুর মাঝখানের নিচের এক্সপানশন জয়েন্টে এক ইঞ্চি ওপরে এবং এক ইঞ্চি নিচে নেমে গিয়েছে।ফলে ওই সেতুর কিছুটা অংশ বসে গিয়েছে।সেতুর অর্ধেক অংশ ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচল।তবে বাকি অর্ধেক অংশ দিয়ে হালকা গাড়ি চলাচল করতে পারবে।বৃহস্পতিবার সেতুর অবস্থার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে যাবে মেরামতের কাজ।আশা করা যাচ্ছে,১৫ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ হয়ে বর্ধমান যাওয়ার জন্য গঙ্গার উপর শ্রীচৈতন্যদেবের নামে ‘ গৌরাঙ্গ সেতু’-র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল ১৯৭২ সালে।তৎকালীন সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের সরকারের পূর্তমন্ত্রী ভোলানাথ সেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।এরপর ৫৮৮ মিটার দৈর্ঘ্য গৌরাঙ্গ সেতুর সর্বসাধারণের জন্য ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি উদ্বোধন করেছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের আমলের পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী। এই সেতুর ওপর দিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ হয়ে,বর্ধমান যাওয়ার বিভিন্ন যানবাহন চলাচল শুরু হয়।কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর থেকে বর্ধমান ভায়া নবদ্বীপ সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে এই সেতুর উপর দিয়ে।এছাড়া নবদ্বীপ থেকে কৃষ্ণনগর,করিমপুর সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলের একমাত্র পথ রয়েছে এই গৌরাঙ্গ সেতুর ওপর দিয়েই।অথচ স্থানীয় মানুষের অভিযোগ,’৩৯ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই সেতুতে ছোটখাটো মেরামতির কাজ হলেও সম্পূর্ণ মেরামতির কাজ হয়নি এখনও পর্যন্ত।ফলে ক্রমশ জীর্ণ দশায় পরিণত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি।কল্যাণীর ঈশ্বরগুপ্ত সেতু মতই গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর মেরামতির দিকে এর আগেই প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত ছিল মত স্থানীয় বাসিন্দা থেকে যানবাহন চালকদের। অথচ তা করা হয়নি।’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ গৌরাঙ্গ সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় সেতুর মাঝখানে বড়সড় ফাটল নজরে পড়ে একজন বাসচালকের।তিনি বাস থামিয়ে অন্যান্য গাড়িচালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের খবর দেন।সেই খবর গিয়ে পৌঁছায় নবদ্বীপ থানার পুলিশের কাছে।তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যায় নবদ্বীপ থানার পুলিশ।পরিস্থিতি দেখে সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে বিভিন্ন ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।নিয়ন্ত্রিতভাবে ছোট গাড়ি চলাচল করতে থাকে।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পূর্তদফতরের নদিয়া হাইওয়ে ডিভিশন ওয়ানের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় কুমার সিং।তিনি সেতুর উপর থেকে তো বটেই, নিচে গঙ্গার পাড়ে নেমে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।দেখা যায়, সেতুর মাঝখানের উত্তর দিকের একাংশে প্রায় ১৫ ফুট অংশ বসে গিয়েছে।এছাড়া,ভারী বৃষ্টির কারণে সেতুর রেলিংয়ের একাংশ ভেঙে পড়েছে।সঞ্জয় কুমার সিংয়ের নির্দেশেই সেতুর অর্ধেক অংশ ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ভারী যান চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।তবে বাকি অর্ধেক অংশ দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে।স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় ঘোষ সহ দুএকজন গাড়িচালক জানিয়েছেন,’ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সমস্যায় পড়বেন প্রচুর মানুষ।দ্রুত সেতুর মেরামত না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।’ যদিও সঞ্জয় কুমার সিং জানিয়েছেন,’ভারী যান চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।তবে কতদিন বন্ধ রাখা হবে, তা সেতুর বর্তমান পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ খতিয়ে দেখার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।অবশ্য আমরা এর আগে থেকেই এই সেতু মেরামতের কাজ শুরু করেছিলাম। পুজো ও মাঝে গঙ্গার জল বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল।সেতু যেখানে বসে গিয়েছে শুধু সেইখানেই নয়, সেতুর পুরো রিপেয়ার করা হবে।দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।আশা করা যাচ্ছে দুসপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’এদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভারী গাড়ি সেতুর ওপর উঠতে না দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct