আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং অসমে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তদন্তের পরিধি বাড়িয়েছে। এখন সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে কাউকে পরীক্ষা করতে পারবে বিএসএফ। সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করতে পারবে। এর জন্য তাদেরকে আর রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ যেমন প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তেমনি সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারকে বিরোধিতার পথে নামার ডাক দিয়েছেন।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সাফাই দেওয়া হয়েছে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও অপরাধ কমাতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে এই অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিএসএফকে দেওয়া নতুন এই ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার অনেকাংশ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কোনও অনুমতি ছাড়াই সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে কাউকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা পাওয়ায় বিএসএফ এবার বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ২২১৬ কিলোমিটার জুড়ে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। যে সমস্ত সীমান্তবর্তী জেলা এর আওতায় পড়বে সেগুলি হল কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও কলকাতার কিয়দাংশ (উত্তর কলকাতা)।
এই নতুন সীমানা পরিবর্তনের ফলে কলকাতার কিছু অংশ পড়ে যাওয়ায় তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর বসিরহাট কলকাতা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ ৫০ কিলোমিটার নিয়ম অনুযায়ী, এখন কলকাতার নাকের ডগায় এসে ব্যবস্থা নিতে পারবে বিএসএফ। সীমানা পরিবর্তনের আওতায় পড়ে যাবে উত্তর কলকাতার বেশ কিছু এলাকাও, যেখানে রাজ্য পুলিশ কিংবা কলকাতা পুলিশের ক্ষমতা খর্ব হয়ে থাকবে।
তবে রাজ্যের সীমান্তবর্তী যে নয়টি জেলায় বিএসএফ ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার পেয়েছে, সেখানে ১৪৮টি বিধানসভা আসন এবং ২৩টি লোকসভা আসন আওতায় এসে যাবে। এর ফলে রাজ্যের মোট ২৯৪ সদস্যের বিধানসভা আসনের অর্ধেকের বেশি এলাকা বিএসএফ অনুমতি ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে। একই ভাবে ২৩টি লোকসভা আসনও বিএসএফের শাসনে চলে আসবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে ১৪৮টি বিধানসভা এলাকা সীমানা পরিবর্তনের ফলে বিএএসেএফ বিনা অনুমতিতে গ্রেফতারের ক্ষমতা পেয়েছে তার বেশিরভাগটাই তৃণমূলের দখলে। সেখানে বিজেপি একেবারেই কোণঠাসা। আর যত দিন যাচ্ছে ততই বিজেপিতে ভাঙন দেখা দিচ্ছে ওইসব এলাকায়। কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপি সরকার নতুন ক্ষমতাবলে বিএসএফকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগালে তৃণমুল কর্মী সমর্থকদের অবাধে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা থাকবে না। সেক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কর্শী সমর্থকরা বিএসএফের ভয়ে নিষ্ক্রিয় থাকলে লাভ হবে বিজেপির। সেক্সেত্রে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্তকদের মধ্যে বিবাদ আরও প্রবল হতে পারে।
এ বিষয়ে এক প্রবীণ সাংবাদিক প্রভাকর মণি তিওয়ারি বলেছেন, বিএসএফ-এর রেকর্ড খারাপ। গরু পাচারে টাকা লেনদেন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এমনকী জাল নোট নিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন বিএসএফ আধিকারিকরা। এই পরিস্থিতিতে, সীমান্ত জেলায় বসবাসকারী লোকদের সেই সব দোষ ধামাচাপা দিতে হয়রানি শিকার হতে পারেন বাসিন্দারা।
তিওয়ারি আরও বলেন, ২০১১ সালে যখন মনমোহন সরকার যখন একই ধরনের বিল এনেছিল, তখন দেশের যে কোনও জায়গায় বিএসএফকে তদন্তের অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরে বিজেপিই এর সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছিল।
গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এর প্রতিবাদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এখন বিজেপি নিজেই একই পরিবর্তন করেছে। যার বিরুদ্ধে তৃণমূল চরম বিরোধিতায় নেমেছে। সঙ্গত কারণেই তাই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছেন, এটি কেন্দ্রের পিছনের দরজা দিয়ে বাংলায় প্রবেশের একটি প্রয়াস। তিনি বলেন, সীমান্ত অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবহৃত হয়। সেখানে নিরাপত্তা আরও কঠোর করা উচিত। শহরের ভিতরে পরীক্ষা করার প্রয়োজন কী?
তার আরও অভিমত, তদন্ত এখনও হয়, তবে চাইতে হয় পুলিশের সহযোগিতা। কিন্তু নতুন পরিবর্তনের পরে, পুলিশকে জিজ্ঞাসা করার কোনও প্রয়োজন হবে না। একটি বড় এলাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধীনে যাচ্ছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, বিএসএফের এলাকা যেভাবে প্রসারিত করা হয়েছে, তাতে বলা যেতে পারে যে এই এলাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধীনে এল। এটা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ। দিল্লি থেকে বলপ্রয়োগের মনোভাব এটা। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছি।
যদিও, বিজেপি মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য বলেছেন, এটি দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি দাবি করে আসছি, যা এখন পূরণ হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct