ফৈয়াজ আহমেদ: বাঙালী ভ্রমনপিপাসু। তাই আমরা সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি। বারবার ছুটে যাই দীঘা কিংবা পুরী বা অন্য কোন জায়গায়। এবার .আপনার ভ্রমণ মানচিত্রে একটা নতুন জায়গা যোগ করুন। বিক্ষিপ্ত মনটা যদি ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় সমুদ্র তটে, পাড়ি দিন দিঘার থেকে ১৫ কিমি দূরে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার অন্তর্গত বিচিত্রপুরে ।
(APONZONE TV আপনজন টিভি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)
‘বিচিত্র’ কথাটির অর্থ হল নানারকম। ‘পুর’ মানে জায়গা। সমুদ্র আর ম্যানগ্রোভের গভীর প্রেমে জায়গাটি সত্যি ভিন্নভাবে মনোরম।
শহরের ব্যাস্ততা কে দূরে সরিয়ে নির্জনতাকে যদি সঙ্গী করতে মন চায়, তাহলে ২-৩ দিনের জন্য ঘুরে আসুন বিচিত্রপুর । আলস্য কাটিয়ে প্রাতঃ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন, নিশ্বাস নিন প্রাণভরে । গ্রামের প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে কখন যে নিজের খেয়ালে হারিয়ে যাবেন যাবেন টেরই পাবেন না। মনের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে এযেন এক নূতন সকালকে আবিষ্কার করা। গ্রামগুলি ভারী সুন্দর , লক্ষ্য রাখুন ওড়িশা সরকারের প্রতীকগুলির দিকে যা দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
বিচিত্রপুরে নির্জনতা ,নীরবতা নিরালা মিলেমিশে ঘিরে এক অমোঘ শান্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। সাগরে ডুব দিলে আপনার শরীর ও মনের ক্লান্তি এক নিমেষেই উধাও হয়ে যাবে । এখানে এসে নৌবিহারের রোমাঞ্চ নিতে ভুলবেন না। ম্যানগ্রোভ অধ্যুষিত জায়গা না ঘুরলে বিচিত্রপুর ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে না। সুবর্ণরেখা মোহময়ী আর তার সাথে রয়েছে সুমুদ্রের জ্বলোচ্ছাস। ম্যানগ্রোভের হাতছানি কি উপেক্ষা করা যায় ? একদিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সোঁদা গন্ধ অন্যদিকে আকাশ বাতাস মাত্ করা কত নাম না জানা পাখির কলরব ।
এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করেন জ্বালানির জন্যে। এটিও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিলুপ্তির অন্যতম একটি কারণ।
সুমুদ্র সৈকতে যাওয়ার জন্য মোটর ভ্যান বা অটোই যথেষ্ট তবে ওঠার আগে ভাড়া নিয়ে দরাদরি করে নেবেন। নতুন লোক দেখলে এরা দামটা বাড়িয়ে বলে। এখানে এসে নৌবিহারের সুযোগ ছাড়বেন না। নৌবিহারে ৬-৮ জনের বসার ব্যাবস্থা আছে , ভাড়া মাথাপিছু ১০০০ - ১২০০ টাকার মধ্যে। এখানে যাওয়ার সময় সকাল ১০:৩০ থেকে বিকেল ৫:৩০ অবধি। সাঁতার না জানা থাকলে সাবধান কারণ এরা কোনো লাইফ জ্যাকেট দেয়না , তাই জলে ভেসে থাকবার মত জিনিস নিয়েই নৌবিহারে যাবেন। বাচ্চাদেরকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো।
এখানে অনেক সৈকত আছে যেমন তালসারি সৈকত, দিঘা সৈকত, মন্দারমণী সৈকত ।
জানেন কি বিলুপ্তপ্রায় Olive Ridley কচ্ছপ বিচিত্রপুরের সমুদ্র সৈকতে বাসা বাঁধে ও ডিম্ পাড়ে ?
বিচিত্রপুরে প্রচুর লাল কাঁকড়া পাওয়া যায়। আকৃতিতে এরা যথেষ্ট বড় । সৈকতে হাঁটার সময় চোখে পড়বে তাদের দ্রুত আনাগোনা। লোক দেখলেই তাড়াতাড়ি এরা গর্তে ঢুকে যায়।
কিভাবে যাবেন
দিঘার থেকে বিচিত্রপুর যেতে ১ঘন্টা সময় লাগে। দিঘা থেকে বিচিত্রপুর যাওয়ার ১৮কিমি পথ জুড়ে সুবর্ণরেখার লুকোচুরি। এই নদী ঝাড়খন্ড থেকে উৎপন্না হয়ে ঘাটশিলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলে গেছে ওড়িশার বঙ্গোপসাগরে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জায়গা হিসাবে দিঘা ভালো তবে
শেষ হয়ে হইলো না শেষ
দিঘা নামটার সাথে আমরা যতটা পরিচিত ,দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বিচিত্রাপুর জায়গাটির সম্পর্কে আমরা ততটা ওয়াকিবহাল নই। সারা বছরই এখানে ফাঁকা থাকে, লোকের সমাগম কম। তার একমাত্র কারণ হলো এই পর্যটন কেন্দ্রকে নিয়ে প্রচার অনেক কম এবং এখানে হোটেল ,রেস্তোরার সংখ্যা গুটিকয়েক। লোক এখানে আসে কম এবং আসলেও ১-২ দিনের বেশি থাকে না। এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য এবং পর্যটন শিল্পকে ত্বরান্বিত করতে সরকারী এবং বেসরকারী উভয় বিভাগকেই এগিয়ে আসতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct