মতিরুল রহমান, কলকাতা: উচ্চশিক্ষা (স্নাতক, স্নাতকোত্তর), লাটেরাল এন্ট্রি, হোস্টেল, কর্যকারী কাউন্সিল,বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা, করোনা প্যানডামিকে শিক্ষা ব্যবস্থা চালানোয় ফ্যাকাল্টির ব্যর্থতা, ইন্টার্ন শিপ এর ভাতা বৃদ্ধি, বেআইনি ভাবে কলেজ গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে জোর করে ডিউটি করানো ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে এবং সমস্যা গুলির সমাধান করার দাবি নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছে রাজ্যের প্যারামেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা। স্বাস্থ্য ভবন ভোটের আগে এই দাবি গুলো পূরণ করা হবে বললেও কোনো কোনো কাজ হয়নি। ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্টদের আগস্ট মাসে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা, কিন্তু ফ্যাকাল্টি এখনো পরীক্ষার ব্যাবস্থা করেনি,এমনকি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ফ্যাকাল্টিকে বার বার মেইল করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি তাই মানুষিক অবসাদে ভুগছে স্টুডেন্টরা।এছাড়াও স্টুডেন্টদের দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে ডিউটি করাচ্ছে কলেজগুলো, বহুবার ফ্যাকাল্টিকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি এমনই অভিযোগ এনেছে প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়ারা।।ইন্টার্নশিপে স্টাইপেন্ডও দেওয়া হয় যৎসামান্য।
তাদের আরোও অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু কোর্স এর কোনো রিক্রুটমেন্ট নেই,তাও ফ্যাকাল্টি কোর্স গুলো বন্ধ করেনি। উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই এমন অনেক ল্যাবকেও বিভিন্ন প্যারামেডিক্যাল কোর্স পোড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে ফ্যাকাল্টি।এছাড়াও ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত নয় এমন বিভিন্ন ল্যাব থেকে সায়েন্স ছাড়া অন্য বিভাগ এর স্টুডেন্টরাও সার্টিফিকেট পেয়ে যাচ্ছে,এর বিরুদ্ধে ফ্যাকাল্টি কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।মেডিকেল টেকোনলজিস্টরা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থায় প্রথমার্ধে থাকলেও তাদের এরাজ্যে উচ্চ শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।করোনার গুরুত্বপূর্ণ থ্রোটসোয়াব সংগ্রহ করে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টরা অথচ তাদেরও এরাজ্যে তেমন কোনো সরকারি কলেজে স্নাতক পড়ানো হয়না। এছাড়াও তাদের দাবি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এ ভুকছে তারা।এক পড়ুয়া বলেন স্বাস্থ্যকর্মী মানেই কি শুধু ডাক্তার এবং নার্স ?
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে আরও যারা যুক্ত তাদের কি কোন ভূমিকা নেই ? স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম স্তম্ভ ডাক্তার, দ্বিতীয় স্তম্ভ নার্স, তৃতীয় স্তম্ভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং চতুর্থ স্তম্ভ জি ডি এ, সাফাইকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী ও সংযুক্ত অন্যান্য কর্মীগণ। কোভিড পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরাও ছিল প্রথম সারির যোদ্ধা।ডাক্তার, নার্সদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরাও। চিকিৎসা পরিষেবায় তৃতীয় স্তম্ভের অধিকারী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টগন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুমূর্ষু রোগীর কাছে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা, রক্ত সংগ্রহ ও পরীক্ষা, এক্স রে, সিটি স্ক্যান, এম আর আই প্রভৃতি করে রোগ নির্ণয় করে এই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টগন। এছাড়াও আই সি ইউ তে মুমূর্ষু রোগী হ্যান্ডেল করা, অপারেশনের সময় সার্জেনের সঙ্গে সহযোগিতা করা, কিডনি বিকল রোগীর ডায়ালিসিস করা, চক্ষু অপারেশনের আগে পাওয়ার পরিমাপ করা প্রভৃতি কাজ করে থাকেন বিভিন্ন বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টগন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে তৃতীয় স্তম্ভের স্বাস্থ্যকর্মীরা চিরউপেক্ষিত রয়ে গেছে। না পান সম্মান, না পাচ্ছেন স্বীকৃতি। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পরিচয় টি এখনও অনেকের অজানা।দুঃখের বিষয় যে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট কারা বা তাদের কাজ কী, সেই বিষয়ে হয়তো অবগত নন।
বৃহস্পতিবার এস এস কে এম এ বৈঠক করে বেরিয়ে নার্সদের প্রসংশা করতে গিয়ে বলেন - “নার্সরা সালাইনও তারা দেই, ব্লাডও তারা নেই, এক্স রে প্লেট, ইউ এস সি থেকে শুরু করে, এম আর আই থেকে শুরু করে সবই তারা করে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সোসাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন প্যারামেডিক্যাল শাখা অর্থাৎ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টগন কারণ এক্সরে , ইউএসজি তারাই করেন।তাই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টগন দাবি করছেন তাঁদের যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতির।তারা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ওয়ার্ডে আর ইমার্জেন্সিতে গেলেও কখনো ল্যাব এ যাননি, তাই হয়তো ল্যাব সম্মন্ধে তার ধারণা পরিষ্কার নয়, মুখ্যমন্ত্রীকে মাঝে মাঝে ল্যাব পরিদর্শনের আর্জি জানাচ্ছি আমরা।অন্যদিকে দীর্ঘদিন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রেখেছে সরকার, তাই ছাত্রদের এই বিক্ষোভে যোগ দিতে চলছে পাসআউট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরাও এবং নিজেদের দাবি নিয়ে এই বিক্ষোভে সামিল হবেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হসপিটালে কর্মরত টেকনোলজিস্টরাও বলে জানিয়েছেন ছাত্রদের বিক্ষোভকে সমর্থন জানাতে আসা এক চাকরিরত মেডিক্যাল টেকনোলিজিস্ট।নিজেদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে বলে জানান এক পড়ুয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct