বাবলু প্রামাণিক, মথুরাপুর: ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর কোয়েম্বাটুরে আয়োজিত 'ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড অন ইঞ্জিনিয়ারিং সাইন্স অ্যান্ড মেডিসিন'-র স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠান। সেখানেই করোনা ভ্যাকসিন 'কোভিশিল্ড' নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার পাচ্ছেন বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবক শুভাশিস নাটুয়া।
মথুরাপুরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম শুভাশিস নাটুয়ার। বাবা ব্রজেন্দ্র নাথ নাটুয়া কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। মা নিতান্তই গৃহিণী। ব্রজেন বাবুর দুই ছেলে দেবাশীষ ও শুভাশিস। ছোট থেকেই অভাবের সংসারে বড় হয়েছে শুভাশিস। এমনকি সংসার চালাতে, একসময় তাকে সব্জি বিক্রিও করতে হয়েছে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন মথুরাপুরের এই যুবক। স্বপ্ন দেখতেন বিজ্ঞানী হওয়ার। কিন্তু, সংসারের আর্থিক অনটন অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তখনই কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি ও সহ শিক্ষকরা সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্কুলের এই দুস্থ মেধাবী ছাত্রের দিকে। স্কুলের তরফ থেকেই বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। আর সেই মতো ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ভর্তি হন শুভাশিস।তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে শুভাশিসকে।
একের পর এক গবেষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ক্যানসারের কোষ নিয়েও গবেষণা করছেন এই যুবক। করোনা অতিমারিতে যখন গোটা বিশ্ব জেরবার, তখন ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে আসেন বাংলার ছেলে শুভাশিস নাটুয়া। করোনা ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন গবেষণার জন্য ডাকা হয় শুভাশিসকেও। সেখানেই 'কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ডায়াগনস্টিক ডেভলপমেন্টে'-র কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাংলার এই গবেষক। করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন ভারত তথা গোটা বিশ্ব জেরবার, সেই সময় মধ্য ভারতের অন্যতম গবেষণা কেন্দ্র IISER ভোপাল থেকে একটি ১৫ জনের বিজ্ঞানী দল গঠন করা হয়। একজন RNA বিশেষজ্ঞ হিসেবে ওই দলে কাজের সুযোগ পান শুভাশিস। করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের জেনেরিক গঠন ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হারের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। সেই কাজের জন্য এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছেন মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র শুভাশিস নাটুয়া।
বিদেশ থেকে গবেষক শুভাশিস নাটুয়া 'বাংলার অভিভাবকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শুধুমাত্র মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে বাধ্যতামূলক ভাবে ঠেলে না দিয়ে, তাদেরকে গবেষণার দিকে উদ্বুদ্ধ করুক। যাদের প্রকৃতপক্ষে মেধা আছে তারা বেসিক সায়েন্সে আসুক, রিসার্চ করুক। কারণ রিসার্চ ছাড়া ডাক্তারদের হাতে কোন রিসোর্স থাকবে না। ফলে এ ধরনের অজানা ভাইরাসকে মোকাবিলা করা, দুষ্কর হয়ে পড়বে।'
ভারত সরকারের থেকে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় তার পরিবারের পাশাপাশি খুশি শুভাশিসের স্কুলও। শুভাশিস একাধিকবার বিদেশে গিয়েছেন গবেষণার জন্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণার কাজ করেছেন। গবেষণার কাজেই বর্তমানে তিনি আমেরিকায় রয়েছেন। ঘরের ছেলে শুভাশিস নাটুয়া ভারত সরকারের এই সম্মান পাওয়ায় খুশি মথুরাপুরবাসিরাও। কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি জানান, 'আমাদের সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে উঠে আসা দরিদ্র বাড়ির এই মেধাবী ছাত্রটির জন্য আমরা আজ গর্বিত। আমাদের স্কুলে পড়ার সময় অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান ছাত্র হিসেবেই আমরা শুভাশিসকে দেখেছি। নানাভাবে স্কুলের তরফ থেকে তার পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়েছে। করোনার মত মারণব্যাধিতে তার এই ভূমিকায়, উপকৃত হবেন দেশ তথা বিশ্বের বহু মানুষ। মানুষের সেবায় নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগাক। ও আরও উন্নতি করুক, এগিয়ে যাক সেই আশা করব।'
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct