এম মেহেদী সানি, বনগাঁ: সম্প্রতি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ লোকসভার অন্তর্ভুক্ত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছয়টিতে জয় পেয়ে এলাকায় কার্যত শক্তিশালী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচিতে বিজেপির একাধিক বিধায়ক এবং নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতি জল্পনা বাড়িয়েছে। গরহাজির নেতা–কর্মী-বিধায়কের তালিকাও দীর্ঘ হওয়ার ফলে বনগাঁয় বিজেপি’র গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য এক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল সহ বেশ কিছু নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকলেও অনুষ্ঠানে দলের কিছু নেতা ও বিধায়ককে দেখা যায়নি। এদিন অনুপস্থিতির তালিকায় ছিলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব, বাগদার বিধায়ক তথা সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, দলের বনগাঁ পৌর মণ্ডলের (উত্তর) সভাপতি শোভন বৈদ্য সহ অনেকেই। এই অনুপস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন ‘‘এটা নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না। এটা আমাদের কাজ।’’
বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিংসা ও ভ্যাকসিন নিয়ে তৃনমূলের দুর্নীতির অভিযোগে গত ৯ আগস্ট বাগদা থানার হেলেঞ্চা বাজারে মশাল হাতে মিছিল করেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।
কিন্তু দেখা মেলেনি বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। যদিও নিজের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিশ্বজিৎ দাস কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলীয় ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় বিধায়কের অনুপস্থিতি নিয়ে দলবদলের গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। এভাবে গত ৭ আগস্ট বিজেপি জেলা সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন খালেক বিশ্বাস। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু মোর্চার জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। নির্বাচনে সাফল্যলাভের পর দলের জেলা নেতৃত্ব তাঁকে এবং তাঁর সংগঠনের বাকি কর্মীদের একপ্রকার গুরুত্বহীন, কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল এবং এটা অসম্মানজনক বলে উল্লেখ করে আক্ষেপ প্রকাশ করে ইস্তফা দেন খালেক বিশ্বাস।
তিনি বলেন, মোদীর উপর আস্থা রেখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম। মোহভঙ্গ হয়েছে। বিজেপি সবার বিকাশ চায় না। তাই বিজেপি ত্যাগ।
মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। সেজন্য ইস্তফা দিলাম।’ ওই ঘটনা জেলা বিজেপিতে বড় ভাঙন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এর কিছুদিন আগে গত ৩১ জুলাই বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বনগাঁ জেলা অফিসে দলের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। কিন্তু সেই বৈঠকেও দেখা মেলেনি বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের৷
১১ জুলাই বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বনগাঁ জেলা অফিসে দলের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেখা যায়নি বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, গাইঘাটার সুব্রত ঠাকুর ও বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল।
বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে জেলা সভাপতিদের বিরোধ বেধেছে। দু’জনের অনুগামীরা এখন আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে বলে মনে করছেন দলেরই একাংশ৷ বিভিন্ন কর্মসূচিতে একপক্ষ গেলে আরেক পক্ষকে দেখা যায় না। সম্প্রতি বিজেপি রাজ্য সভাপতি বনগাঁয় বৈঠক করতে এসেছিলেন। সেখানে মনসপতি দেব উপস্থিত থাকলেও দেখা যায়নি শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর সমর্থক নেতা ও বিধায়কদের৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct