শ্যামল রায়: ৭৫টি বছর হতে চলেছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। আমরা মনে রাখি আবার অনেক ক্ষেত্রে ভুলে যাই। স্বাধীনতা সংগ্রামী বসন্ত বিশ্বাসের কথা ক্রমশ যেন অজান্তে মুছে যাচ্ছে। তবুও স্মরণে মননে রাখার চেষ্টা করছি মাত্র আমরা কিছু মানুষ। মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন আমাদের সরকার নানা ভিডিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য।
বসন্ত বিশ্বাস এর জন্য আমাদের নানান ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী দিন বাস্তবায়িত হবে। শ্যাওলা ধরেছে ৷ চারিদিকে আগাছা ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ বসেও গেছে কয়েকটি জায়গায় ৷ গ্রামের বীর সন্তানের স্মৃতিরক্ষায় যে বেদি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে আজ অবহেলার ছাপ স্পষ্ট ৷ মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য ৷ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন যে বিপ্লবী, সেই বসন্তকুমার বিশ্বাসকে মনে রাখেনি দেশ, দেশের প্রশাসন ৷নদিয়ার ভীমপুর থানার পোড়াগাছা গ্রাম ৷ ১৮৯৫সালের ৬ফেব্রুয়ারি এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ দাদু দিগম্বর বিশ্বাস ছিলেন নীল বিদ্রোহের নেতা ৷ জেঠু মন্মথ নাথ বিশ্বাস ছিলেন বিপ্লবী ৷ তাই ছেলেবেলা থেকেই স্বদেশি আবহে বেড়ে ওঠেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ এলাকারই প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা ৷ তাঁর বয়স যখন ১০, তখন বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন ৷ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ৷ এরপরই সক্রিয় ভাবে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ সামনে থেকে লড়াই করেন ৷ তাঁর মতো অসংখ্য বিপ্লবীর আন্দোলনে বাধ্য হয়ে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে ব্রিটিশরা ৷ তখনও অবশ্য পূরণ হয়নি তাঁর লক্ষ্য ৷ চলতে থাকে বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ৷ ১৯১২সালের ২৩ ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ পরে কৃষ্ণনগরের একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷ ১৯১৫সালের ১৫ মে তাঁর ফাঁসি হয় ৷এরপর বসন্তকুমার বিশ্বাসের বসতভিটে ভেঙে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয় ৷ কী অবস্থায় রয়েছে সেই শহিদ বেদি, তা দেখতে যাওয়া হয়েছিল পোড়াগাছা গ্রামে ৷ চোখে যা ধরা পড়ল, তাতে পরিচর্যার অভাবটা প্রকট ৷ জলকাদা ভরা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় বেদির সামনে ৷ বাঁধানো হয়নি রাস্তাটাও ৷ বেদির দুর্দশা আরও বেশি ৷ গায়ে শ্যাওলা ধরেছে ৷ শেষ কবে বেদির চত্বর পরিষ্কার করা হয়েছিল, তা জানেন না স্থানীয়রাও ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ নেই ন্যূনতম সংরক্ষণের ছাপ ৷ রয়েছে আগাছা ইটের গাঁথনির মধ্যে দিয়ে ফোকলা দাঁতের মতো দেখা যায় বাড়ির ভিতরের অংশ ৷ বাড়িটিও সংরক্ষণের কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। কাছেই একটি বাড়িতে থাকেন বসন্তকুমার বিশ্বাসের ভাইপো মনোজিৎ ও তাঁর স্ত্রী ৷ জানালেন, বিপ্লবীর স্মৃতিরক্ষায় কিছুই করেনি সরকার ৷ কেউ কখনও খোঁজ নিতে আসেনি ৷ নিজেদের উদ্যোগেই একটি দরমার ঘর বানিয়েছেন ৷ বসন্তকুমার বিশ্বাসের বেদি যারা দেখতে আসেন, তাঁদের সেখানেই বসান ৷ ঘরে রয়েছে বসন্তকুমার বিশ্বাসের একটি আবক্ষ মূর্তি ৷ অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই ৷স্থানীয়দের অবাক করে আরও একটি বিষয় ৷ বসন্তকুমার বিশ্বাসের এক ভাইপো উজ্জ্বল বিশ্বাস রাজ্যের মন্ত্রী ৷ অথচ এরকম চরম অবহেলায় রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিষ্যের ভিটে ও বেদি ৷
যদিও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এর দাবি, এর আগের সরকারের আমলে বিন্দুমাত্র চিন্তা ভাবনা ছিল না স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে। আমরা সরকারে আসার পর থেকেই ওখানে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছি। আমি নিজেও উদ্যোগ নিয়ে পুরোনো বাড়ি মেরামত করার চেষ্টা করেছি। শুধুমাত্র এ কার উদ্যোগে সবকিছু করা সম্ভব নয়। যেহেতু তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন সেই কারণে সাধারণ মানুষের উচিত তাকে সম্মান জানিয়ে তার স্মৃতিটা আগলে রাখার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct