দিলীপ মজুমদার: বাবুল সুপ্রিয় মশায়, অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না। একটু খোলসা করে বলতে হবে। একটু ঝেড়ে কাশতে হবে। আমরা আপনার গানের অনুরাগী। আমরা জানি আপনি টাকা ধর্ম টাকা স্বর্গ জপ করেন না। আমরা এও জানি যে আপনি পেশাদার রাজনীতিক নন। তাঁদের মতো মারপ্যাঁচ আপনার নেই। তাঁদের মতো মুখে হাসি, বুকে রাগ আপনার নেই। আমরা তো আপনাকে পছন্দ করি। আমাদের জন্য আপনি অকপটে কিছু বলুন। আড়াল দিয়ে লুকিয়ে যাবেন না।
২০১৪ সালে আপনি যাঁর নয়নের মণি ছিলেন, ২০২১ এ আপনি তাঁর দু চোখের বিষ হলেন কি করে!
‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে’—বলেছিলেন স্বপ্নের সওদাগর। ২০১৪ সালে। শিল্পনগরী আসানসোলে আপনাকে সাংসদ করলেন স্বপ্নের সওদাগর নরেন্দ্র মোদি। জিতলেন বিপুল ভোটে। জিতেই মন্ত্রী। অবশ্য প্রতিমন্ত্রী। তারপরে ২০১৯। সেই একই কেন্দ্র। আবার জিতলেন। আবার মন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী। শুধু দপ্তর বদল। কিন্তু আপনার মনে প্রশ্ন জাগে নি সেদিন? পূর্ণমন্ত্রী নয় কেন ? বাঙালি বলে ? আপনি কি একদম জানতেন না হিন্দি বলয়ের মনের কথা? যুগ যুগ ধরে বাঙালির বঞ্চনার কথা?
আপনি সাংসদ আছেন, মন্ত্রীও আছেন, তবু ২০২১ এ টালিগঞ্জ বিধানসভায় আপনি লড়লেন। কার সিদ্ধান্ত ? যদি আপনার হয়, তাহলে বলতে হবে আপনার বাস্তববুদ্ধির অভাব আছে। এ রকম আত্মঘাতী খেলা কেউ খেলে না কি? না কি, আপনি ভেবেছিলেন ওঁদের ‘জিতে গেছি জিতে গেছি’ রবে আপনি সত্যই জিতে যাবেন? আপনি অরূপ বিশ্বাস মশায়ের কাছে হেরে গেলেন। এই হারটা কাল হল। স্বপ্নের সওদাগর মনে মনে ঠিক করে নিলেন ‘মুঝে বাবুল নেহি চাহিয়ে’। এসব তাঁর হিসেব।
৭ জুলাই স্বপ্নের সওদাগর রদ-বদল করলেন মন্ত্রীসভার। বসিয়ে দিলেন ১২ জন মন্ত্রীকে। তার মধ্যে আপনি একজন। বাকি ১১ জন মুখ বুজে মেনে নিলেন এই নিদান। পারলেন না আপনি। কেন, অভিমান ? বলুন না একটু খোলসা করে। কিছুদিন চুপ করে রইলেন। যেন এবার শুধু গান নিয়ে থাকবেন। অতি সম্প্রতি আপনার সিদ্ধান্ত প্রকাশ পেল। আপনি সাংসদ পদ ত্যাগ করবেন, দল ত্যাগ করবেন, রাজনীতি ত্যাগ করবেন ; তবে তার সঙ্গে জানিয়ে দিলেন আপনি অন্য কোন দলে যাবেন না। আপনি ওয়ান টাইমার। আপনি দলবদলু হলে আমাদের বিতৃষ্ণা আসত এটা ঠিক। উপনিষদের সেই ত্যাগ করে ভোগ করার জন্য তো আপনি এসব করেন নি। তাহলে কেন আপনি সাংসদ পদ, দল ও রাজনীতি ত্যাগ করলেন বাবুল সুপ্রিয় ? আচ্ছা, স্বপ্নের সওদাগর যদি আপনার মন্ত্রীত্ব কেড়ে না নিতেন, তাহলেও কি আপনি এই সিদ্ধান্ত নিতেন ? তাই যদি হয়, তা্হলে তো বলতে হবে অর্থলোভ না থাকলেও ক্ষমতার লোভ আপনার ছিল। ক্ষমতা চলে যেতেই আপনি ক্ষমতাসীনদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন। আপনাকে সাংগঠনিক পদ দেওয়ার কথা ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে পদের যোগ্য আপনি হতে পারতেন না, তাই সে পদ আপনি গ্রহণ করতেন না বলে মনে হয়।
আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, যে দলে আপনি যোগ দিয়েছিলেন, সে দলের নীতি ও আদর্শকে বুঝেই কি গিয়েছিলেন ! না কি, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে’ কথার জাদুমন্ত্রে তাৎক্ষণিকভাবে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন?
আপনার অনুরাগী হিসেবে আমরা জানতে চাই এ সব। বাংলা ভালোই লেখেন আপনি। লেখায় বলুন মনের কথা। গানেও বলতে পারেন। কিন্তু দোহাই আপনার, অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct