অল্টারনেটিভ মেডিসিন
জাম ও জাম পাতার আছে নানা ঔষধি গুণ
ডঃ রিংকী ব্যানার্জী
প্রখ্যাত নেচারোপ্যাথ ও অপটিশিয়ান
_____________________
জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। ব্লাক প্লাম, জান্বুল, জান্বান, মালাবার প্লাম, জান্বাস, মালাবার প্লাম, কালো জামুন, নাভাল প্রভৃতি। জাম সাধারণত জুন থেকে জুলাই মাসে পাওয়া যায়। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কালো জাম খাওয়ার উপকারিতা ।
জামে প্রচুর আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভূগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভালো। জামে ভিটামিন এআর সি রয়েছে। এছাড়াও এতে থাকে নানা মিনারেল, যা আমাদের চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী ।
জামখেলে পেট ঠান্ডা হয়, ফলে চটপট হজম হয়ে যায়। যাঁদের অন্বলের সমস্যা রয়েছে, তারা বেশি করে জাম খেলে উপকার পাবেন। আ্যাসট্রিনজেন্ট প্রপার্টি থাকর ফলে জাম ত্বক অয়েল ফ্রি রাখে। এছাড়াও অ্যাকনে আর কালো ছোপ দুর হয়। জামে থাকে অক্সিলিক আ্যাসিড, ম্যালিক আ্যাসিড, ট্যানিন বেটুলিক আ্যাসিড ইনফেকশন দূরে রাখে ।
এছাড়াও জাম অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। জামে আ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি রয়েছে, এর সাহায্যে দাত ও মাড়ি ভালো থাকে। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দুরে রাখতে সাহায্য করে।
জামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। ফলে শরীরে ইমিউনিটি বাড়িয়ে দেয় । শরীরকে কমন সিজনাল ডিজিজের হাত থেকে রক্ষা করে।
জামের মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ দূরে রাখে। যাঁদের ডায়বেটিস হয়েছে তাদের জন্য জাম খুব ভালো । এতে অ্যান্টিডায়েবেটিক প্রপার্টি রয়েছে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।
জামে প্লাইসেমিক ইনডেক্ট কম হওয়ার ফলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া বা বারবার মুত্রত্যাগ বা ডায়বেটিসের লক্ষণ এসবও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
জামে কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসন্মত। তাই যাঁরা ওজন নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ও ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তারা নিয়মিত জাম খেতে পারেন।
জামে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি ।
জাম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মানুষের মুখের লালার মধ্যে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়, যা থেকে জন্ম নেয় ব্যাকটেরিয়া থেকে মুখে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর জাম মুখের ভেতরে তৈরি ক্যানসার সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে। জামের কচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সাদা বা রক্ত আমাশয় সেরে যায়। যাঁদের জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ থাকে, তারা জাম পাতার রস ২-৩ চামচ খেলে উপকার পাবেন।
শরীরে পচা ঘা হলে জামের পাতাকে সিদ্ধ করে সেই কাথ দিয়ে ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়। বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও নার্ভ কর্মক্ষমতা হারায়।
জাম পাতার উপকারিতা
শুধুমাত্র জাম নয়, জাম পাতার নানা ওষধি গুণ রয়েছে। জাম পাতা ত্বকের সমস্যা ও আলসার চিকিৎসায় সাহায্য করে। ত্বকের ফোলা ভাব ও ব্যথা নিরাময় করে। জামপাতা নিয়মিত খেলে মুখের আলসার দূর হয়। জামপাতায় আ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট রয়েছে যা ত্বকের যেকোনো সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। জ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক প্রাচীনকাল থেকে জামপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। জামপাতা জ্বর কমাতে সাহায্য করে। জামপাতার অনেক ওষধি গুণ রয়েছে যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। জামপাতা খেলে বদহজম দূর হয়। যদি কেউ অনেকদিন ধরে পেটের সম্যায় ভোগেন সেক্ষেত্রে জামের পাতা খেলে উপকার পাবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct