কোভিড ও অ্যালার্জির উপসর্গ এক-বিভ্রািন্ত
ডাঃ প্রকাশ মল্লিক
এম.ডি (হোমিও) (ধন্বন্তরী)।
সিনিয়র সুপার স্পেশালিস্ট হোমিওপ্যাথ।
______________
বছরের এই সময়টা ঋতুগত আ্যালার্জির সমস্যা যথেষ্ট প্রকট হয়ে ওঠে, ভারতের মতো একই ছবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। ভারতে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ চলছে আর মার্কিন মুলুকে চতুর্থ পর্যায়ের ঢেউ । এই সময়টা অনেকেরই নাক চুলকানি, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ থেকে জল পড়া, হাঁচি, কাশির সমস্যা হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণগুলি অ্যালার্জিজনিত। কখনও কখনও জ্বরের সঙ্গে সামান্য বা মধ্যমাত্রার গলাব্যথাও থাকতে পারে। কিংবা কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। এখন সমস্যা হচ্ছে এতদিন পর্যস্ত এগুলিকে অ্যালার্জির সাধারণ উপসর্গ হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়েছিল, কিন্তু কোভিড-১৯-এর ক্লাসিক্যাল উপসর্গও এগুলি । ফলে এই সমস্যাগুলি যদি কোনও রোগীর থাকে, তাহলে তার অ্যালার্জির সমস্যা হয়েছে নাকি সে কোভিডে আক্রান্ত-সেটি চিহ্নিত করতে ফিজিক্যাল এগজামিনেশন করে চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
স্বল্পমাত্রার বা মধ্যমমাত্রার কোভিডের সঙ্গে আ্যালার্জির উপসর্গগুলি মিলে যাচ্ছে জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের নিউ ইয়র্ক আই এ্যান্ড ইয়ার ইনফারমারি অব মাউন্ট সিনাইয়ের অটোল্যারিঙ্গোলজিষ্ট ডাঃ প্রোগোরি লেভিটিন। অপরদিকে দ্য আমেরিকান কলেজ অব অ্যালার্জি, আজমা ও ইমিউনোলজির প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ স্ট্যানলি ফাইনম্যানের মতে, অনেকসময়ে এই অ্যালার্জির সমস্যাগুলি এত বেড়ে যাচ্ছে যে এগুলিকে অনেকেই কোভিডের উপসর্গ ভেবে ভূল করেন।
ডাঃ লেভিটিন জানান, নাক চুলকানি, আ্যালার্জিক রাইনাইটিস (নাক দিয়ে জল পড়া), একটানা ১০-১২টা হাঁচি হয়ে যাওয়া এগুলি কোভিড-১৯-এর চেয়ে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ভেবেই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঋতুগত অ্যালার্জি হয় যখন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ভুলবশত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান যেগুলি শরীরে ঢুকেছে সেগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে।
গাছ, ফুলের রেণু, ঘাস, শিশির এমনকী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকেও অনেকের অ্যালার্জি হয়। শরীর যদি বুঝতে পারে কোনও কিছু থেকে শরীরে অ্যালার্জি হয়ে বিক্রিয়া হচ্ছে, তাহলে শরীর হিষ্টামিন নামক একটি রাসায়নিক নির্গত করে। হিস্টামিনের ফলে শরীরে যে প্রদাহ হয় তার থেকেই চুলকানি ও হাচির মতো উপসর্গশুলি দেখা দেয়, এর সঙ্গে নাক ও চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা তো আছেই।
তবে চিকিৎসক লেভিটিন বলেন, এর সঙ্গে যদি আপনার জ্বর থাকে, তাহলে কোভিড- ১৯-এর জন্য রক্তপরীক্ষা করানো উচিত। কোভিড- ১৯ থেকে জ্বর হয়, অ্যালার্জির সমস্যা থেকে কখনও জ্বর হয় না। কোভিড ও আ্যালার্জির মধ্যে আর যেসব উপসর্গের মিল রয়েছে তার মধ্যে আছে প্রচণ্ড কাঁপুনি, পেশিতে বা সারা শরীরে ব্যথা, গা বমি ভাব বা বমি করে ফেলা, ডায়ারিয়া হওয়া।
এছাড়াও মুখে যাদের অনুভূতি ও নাকে গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া, তবে অ্যালার্জি খুব বাড়াবাড়ি হয়ে নাক বন্ধ হলে তবেই গন্ধের অনুভূতি চলে যায়। ডাঃ লেভিটিনের বক্তব্য এ প্রসঙ্গে প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “অ্যালার্জি থেকে নাক বন্ধ হয়ে মারাত্মক অবস্থা হলে তবেই মানুষ গন্ধ নিতে পারে না, কিন্তু কোভিডে নাক বন্ধ হয় না।
দ্য ইউ এস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল আ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, কোভিড-১৯ ও আ্যালার্জির আরও কতগুলি কমন উপসর্গ হয়-কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নিতে গেলে মনে হয় শরীরে অক্সিজেনের স্বল্পতা আছে, তাই টেনে টেনে শ্বাস নিতে হচ্ছে, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, চিকিৎসকরা বলছেন, যারা ঋতু পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে চান তারা ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখুন, যাতে বাইরে থেকে দূষিত বায়ু, ফুলের রেণু বা বায়ুবাহিত হয়ে অন্য কোনও অ্যালার্জিক উপাদান ঘরে ঢুকে পড়তে না পারে । ঘরের ধুলো পরিষ্কার করার সময়ে নাক মুখ ভালো করে বেঁধে নিন। এয়ার ফিল্টার লাগান, বিছানার চাদর ও বালিশের কভার প্রতি সপ্তাহে বদলান, প্রয়োজনে কিছু এ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ যেমন সেট্রিজিন, লিভোসেট্রিজিন, ফেক্সোফেনাডিন গ্রুপের ট্যাবলেট, স্টেরয়েডযুক্ত নাকের স্প্রে বাড়িতে রেখে দিন।
তবে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট যদি খুব বেশি বাড়ে, তাহলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তখন কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। ডাঃ লেভিটিনের মতে, “এখন আমরা সকলেই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি, ফলে যে কোনও উপসর্গ কোভিডের হতে পারে, সুতরাং পরীক্ষা করিয়ে দেখতে অসুবিধা নেই।
দুই-তি সপ্তাহ নয়, দুই-তিন দিন উপসর্গগুলি থাকলেই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct