আপনজন ডেস্ক: সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন পাঞ্জাবের শিখও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। রবিবার সকালে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাঞ্জাবের মোগার ভলুর গ্রামে একটি মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানে বাধা পড়েছিল। তবে গুরুদ্বারের দরজা গ্রামবাসীদের জন্য খুলে দেওয়ায় সম্প্রীতি রক্ষায় কোনও ছেদ পড়েনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিখ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীরা এই অনুষ্ঠানের সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সেখানে লঙ্গরখানার ব্যবস্থা ছিল। সঙ্গে ছিল গরম জিলিপি। সেই সঙ্গে বিশেষ প্রার্থনা ‘আরদাস’-ও অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পালা সিং (৪৫) সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাদের গ্রামে সাতটি গুরুদ্বার এবং দুটি মন্দির রয়েছে, তবে কোনও মসজিদ নেই। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগে একটি মসজিদ ছিল। তবে তা সময়ের সাথে সাথে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছিল। গ্রামে মাত্র চারটি মুসলিম পরিবার রয়েছে। কারণ তারা এ দেশে থাকাটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। তখন থেকেই আমাদের গ্রামে হিন্দু, মুসলিম এবং শিখ পরিবার মিলেমিশে বাস করে। তবে, আমরা সকলেই চেয়েছিলাম যে মুসলিম পরিবারেরও তাদের উপাসন গৃহ থাকুক। তাই স্থির হয়েছিল যে মসজিদটি এর আগে যেখানে ছিল সেখানে পুনর্নির্মাণ করা হবে। পালাসিং আরও বলেন, রবিবার যখন মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তখন ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। জমিটি জলাভূমিতে পরিণত হয়েছিল। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে এই কর্মসূচি স্থগিত করতে হতে পারে বলে সবাই অত্যন্ত দুঃখিত ও হতাশ হয়েছিল।
তবে সমস্ত গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে অনুষ্ঠানটি নিকটবর্তী শ্রী সৎসাহিং সাহেব গুরুদ্বারে স্থানান্তরিত করা হবে। গুরুর ঘর সর্বদা সকল সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত। তারপরে সবাই একত্র হয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নিল। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সমস্ত গ্রামবাসী তাদের ধর্ম নির্বিশেষে অংশ নিয়েছিল।
পঞ্চায়েত প্রধান আরও বলেন, বিগত ৭০ বছরে গ্রামবাসীরা কখনই কাউকে বঞ্চিত হতে দেয় না। তারা খুব খুশি যে একটি মসজিদ আমাদের দশম উপাসনালয় হবে। গ্রামবাসীরা এমনকি মসজিদটি নির্মাণের জন্য অনুদানও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের সাধ্যমতো দান করেছেন। ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যরাও দান করেছেন। গ্রামের প্রাক্তন প্রধান বোহর সিং গুরুদ্বারে বক্তৃতার সময় বলেন, তাদের পুরো গ্রাম মসজিদটি নির্মাণে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নায়েব শাহী ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ উসমান রাহমানী লুধিয়ানভি এভাবে এগিয়ে আসার জন্য গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct