বিশ্বজিৎ মিশ্র: বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, তুলে না ধরলেই নয়!!
নাসার গবেষণায় জানা গেছে alovera ( ঘৃতকুমারি) প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহ করে। ঘরের মধ্যে থাকা কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ফর্মাল ডিহাইড ( টক্সিন ) এর মতো ক্ষতিকর জিনিস শোষণ করে নেয়। মাত্র একটি গাছ.. ৯ টি বায়োলজিকেল এয়ার পিউরিফাইড করতে পারে।
এবার আসি বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবজাতির বেঁচে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মহা সঙ্কট জিনিস অক্সিজেন নিয়ে কিছু তথ্য সম্পর্কে..। একদিনেএকজন মানুষের ৫৫০ লিটার অক্সিজেন দরকার। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সকলের জেনে রাখা উচিত্.. পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ বছরে ১১৮ কেজি অক্সিজেন বাতাসে ছাড়ে। একটি গাছ ১১.৮ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পাতা ও কাঠে পরিণত হয়। একটি পূর্ণ গাছ বছরে ২৩ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড সিঙ্ক করে।
তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া গাছের পরিবর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ না করলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে মানবজাতি তথা সমগ্র বিশ্ব। এইসব কারণের জন্য অতীত থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতে মারণ মহামারীর কোপে বার বার পড়তে হচ্ছে মানব জাতিকে। যেমন.. সারা বছর বিশ্বে যক্ষ্মাতে ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ মরে! ৪৩০ খ্রিস্ট পুর্বাব্দে “এথোনিয়ান” প্লেগ ইথিওপিয়া’য় ভয়ঙ্কর মৃত্যুর মিছিল ঘটিয়ে ছিল। ১৬৫-১৮৫ খ্রিস্টাব্দে “এন্টোনাইন” প্লেগ ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছিল। সুতরাং এমন ধরনের মহামারীর মারণ ছোবলের কোপে পড়তে হয়েছে সমগ্র মানব জাতিকে।
এবার আসি.. সমগ্র বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার সাথে সাথে.. ভারতবর্ষেও পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়.....
চিপকো আন্দোলন কে কেন্দ্র করে।
আন্দোলনটি ১৯৭৪ সালের ২ মার্চ উত্তর প্রদেশে , বন ঠিকাদারদের দ্বারা গাছ এবং বনাঞ্চলের ক্ষেতগুলি কেটে ফেলা আটকানোর লক্ষ্যে স্তঃস্কূর্তভাবে শুরু হয়েছিল। লোকেরা যখন গাছ কাটছিল তখন গাছগুলিকে তারা জড়িয়ে ধরে আটকে ছিল। চিপকো আন্দোলনে এবং সাধারণভাবে পরিবেশবাদী সুন্দরলাল বহুগুণা’র অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। তাঁর চিপকো স্লোগান “বাস্তুশাস্ত্রই স্থায়ী অর্থনীতি”।
অধিকাংশ সংক্রামক রোগের মহামারির উৎপত্তি হয়েছে..পশুপাখি থেকে। যেখানে মানুষ নিজেই বন্যপ্রাণীর বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে অনধিকার প্রবেশ করে সংক্রামক রোগ মানবদেহে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে বেগবান করেছে। পশুপাখির ভূমিকা সবসময় ছিল গৌণ। ঠিক এখন যেমন... করোনা’র কারণে ব্যবহৃত মাস্ক থেকে পিপিই কিট, প্লাস্টিক সহ নানা ব্যবহৃত সামগ্রি বৈজ্ঞানিক উপায়ে নষ্ট না করে, তাকে আরো মারাত্মক রুপ ধারণ করার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সচেতন না হলে..এর থেকে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার সকল প্রকার উপাদান সংগ্রহ করে.. তার চারপাশের পরিবেশ থেকে’ই। আবার সেই মানুষই, স্বার্থপরে’র মত পরিবেশকে শোষণ করে চলে যথেচ্ছভাবে। যে পরিবেশের উপর ভিত্তি করে, মানব সভ্যতার এতো উন্নতি ও সমৃদ্ধি, সেই পরিবেশের এমন শোষণ সভ্যতার পক্ষে প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়!
ফলে দেখা দেয়, পরিবেশের নানা ধরনের ব্যাপক অবক্ষয়, বিপর্যয়। যার ফলস্বরূপ আসে.. নানা প্রকার কঠিন ও মারণ ব্যাধি, বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব সমাজ। যার পরিণতি প্রকৃতির সাথে সম্পর্কের অবক্ষয়, মানুষকে ঠেলে দেয..নিশ্চিত ধ্বংসের পথে!!
সুতরাং.. বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতি’তে অতীতকে ফেরানো সম্ভব নয় ঠিকই! তবে, আমরা প্রথমিক শিক্ষায় বাধ্যতা মূলক করতে পারি, সরকারের বাজেট বৃদ্ধি করতে পারি, গাছ লাগাতে পারি, আমাদের আশে-পাশের শহরকে আরও সবুজ করতে পারি, বাড়ির বাগান পুনর্নির্মাণ করতে পারি, নিজেদের ডায়েট পরিবর্তন করতে পারি, নদী ও উপকূল পরিষ্কার রাখতে পারি, বর্ষাকালে জল ধরে রাখতে পারি, রাসায়নিক দ্রব্য কম ব্যবহার করতে পারি, যথেচ্ছাচারে বৃক্ষ ছেদন বন্দ করতে পারি। আমরা এমন একটি প্রজন্ম, যারা এই সবের মাধ্যমে প্রকৃতির সুস্থ, সৌন্দর্য ও শান্তি বজায় রাখতে পারি।
তাই তো, বিশ্ব মানবজাতি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে..
প্রকৃতি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! এর গুরুত্ব হয়তো অনেকে’ই করোনা অতিমারীর পর কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি সকলেই। কিন্তু.. পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। কিন্তু.. দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, এখনও অনেকেই এড়িয়ে চলেন এই ভয়াবহ গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব সত্যটিি।
সুতরাং শেষে বলবো..
সকলে উদ্বিগ্ন না হয়ে, পরিবেশের সচেতনতা’র বিষয়ে সমগ্র মানব জাতির সক্রিয় হয়ে ওঠা উচিত। এখনও কিছুটা সময় আছে। যদি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নিজ, নিজ দায়িত্ব পালন করেন.. তাহলে এই সুন্দর ধরণী আবার সুজলা- সুফলা শস্য শ্যামলায় ভরে উঠবে।
বাঁচলে বিশ্ব থাকবে প্রাণ..
মানুষের ফিরুক “ হুশ ও মান”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct