বাবলু প্রামাণিক, ক্যানিং: ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে হওয়ার কথা ছিল মাদার এন্ড চাইল্ড হাব। কিন্তু ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখে ক্যানিংয়ের বর্তমানে নব নির্মিত ‘মাদার এন্ড চাইল্ড’ হাব কে আড়াইশো বেডের করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হল। শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত অসুস্থ রোগীদেরকেই এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। আগামী মঙ্গলবারের পর থেকে এই হাসপাতাল থেকে রোগী ভর্তির কাজ শুরু করা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেল।সারা ভারত বর্ষ জুড়ে এখন ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালাচ্ছে এই মহামারী করোনা। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। একই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। আর সেই কারণেই উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন হাসপাতাল গুলিকে করোনা হাসপাতাল পরিষেবার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। সেই মতো ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের মধ্যে নবনির্মিত মাদার এন্ড চাইল্ড হাব কে করোনা হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করা হলো।
নির্মীয়মাণ এই হাসপাতালটি তৈরি হলেও শুধু জেলা নয় জেলার বাইরে থেকে বহু মানুষ এখানে আসবেন চিকিৎসার জন্য। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এই হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন।
সঙ্গে ছিলেন ক্যানিংয়ের মহকুমা শাসক রবি প্রসাদ মিনা। অতিরিক্ত জেলা শাসক শঙ্খ সাঁতরা, ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল সুপার অপূর্ব লাল সরকার প্রমুখ। ইতিমধ্যেই এই হাসপাতালটি তৈরির কাজ কতদূর সম্পূর্ণ হল তা দেখার জন্যই এই পরিদর্শন। হাসপাতালের বিভিন্ন বিল্ডিং ঘুরে দেখেন জেলাশাসক ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় চার বছর আগে এই মাদার এন্ড চাইল্ড হাবের শিলান্যাস করেন। ৩০ কোটি টাকা খরচ করে এই ৫ তালা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। করোনার মহামারীর জন্য গত বছরই এই বিল্ডিং টিতেই করোনা হাসপাতাল তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তা হয়নি। ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠের মধ্যে যে স্টেডিয়াম আছে সেখানেই মূলত করোনা হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ৫৫ বেডের হাসপাতালটি আপাতত এই এলাকার মানুষের ভরসা। ইতিমধ্যে সেখানে ও উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়। পাঁচটি সিসিইউ থাকলেও প্রয়োজন হয়ে পড়ছে আরো সিসিইউ। সেই কথা মাথায় রেখে স্টেডিয়ামে তৈরি করোনা হসপিটালটির সিসিইউ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ করা হচ্ছে। মূলত সিসিইউ পরিষেবাটি পাওয়া যাবে স্টেডিয়ামের কোভিড হাসপাতাল থেকে। অন্য যে সমস্ত করোনা রোগীরা থাকবেন তারা এই নবনির্মিত কোভিড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হবে। এদিন বেলায় পরিদর্শন করার পর আধিকারিকরা ঠিক করেছেন, প্রতিটি ফ্লোরে ৭০ জন করে রোগী রাখা হবে।সবমিলিয়ে ২৫০ বেডের হাসপাতাল হবে এটি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এনে এখানে চিকিৎসার কাজে লাগানো হবে। এ বিষয়ে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, চিকিৎসার অভাবে যাতে কোন ও রোগীর মৃত্যু না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের উদ্দেশ্য। আর সেজন্যই আগামী ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এটিকে পুরোপুরি একটি হাসপাতালে রূপান্তরিত করে দেওয়া হবে। অনেক কাজ ই এখানে হয়ে গেছে অল্প কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো জন্যই এ দিন দেখতে আসা। আপাতত চালু করার পরে যে কাজ গুলো থাকবে সেগুলো আস্তে আস্তে তৈরি করা হবে। তবে ক্যানিংয়ের স্টেডিয়ামে চালু কোভিড হাসপাতালকে অক্ষুন্ন রেখে এই হাসপাতালকে নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে এবং স্টেডিয়ামের হাসপাতালটির পরিকাঠামো আর ও কিছুটা বাড়ানো হবে। জল, বিদ্যুৎ, ও লিফটের ব্যবস্থা সহ বেশ কিছু ঘাটতি এখনো আছে এই মাদার এন্ড চাইল্ড হাবে। রাতদিন কাজ করে জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে।এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, যেভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে এই হাসপাতালটিকে তৈরি রাখা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই রোগীরা পেতে শুরু করবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেডের করোনা হাসপাতাল করা হচ্ছে এখানে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct