আপনজন: কোনও সতর্কতা ছাড়াই ভোটারদের সামনে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করার ঘটনায় কোচবিহারের জোড়পাটকি গ্রাম এখন শোকে কাতর। কাতারে কাতের মানুষ এসে রবিবার হামিদুল মিয়া (৩১), মনিরুজ্জামান মিয়া (২৮), সামিউল হক (১৮) এবং নূর আলম মিয়া (২০)-র শেষ কৃত্যানুষ্ঠান নামায-এ জানাযায় অংশ নেন। তারপর তাদেরকে দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে।
এই চারজনের অকাল প্রাণ যাওয়ায় কান্নার রোলে ভেসে যাচ্ছে তাদের পরবিার। তারা ভাবতেই পারছে না এবাবে অকালে প্রাণ যাবে তরতাজা চারজন মুসলিমের। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন কেন গুলি চালাল জওয়ানরা তার যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা তারা বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। শোকের মধ্যে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। এখন নিহতদের পরিবারের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড কোনওদিন ঘটেনি এই গ্রামে।
এত ভোট গিয়েছে, কখনও রক্তপাত হয়নি। কিন্তু শনিবার কী যে হল, ঘটনার আকস্মিকতায় শোকস্তব্ধ গ্রামবাসীরা। গ্রামের চার সন্তানের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন গুলি চালাল কেন্দ্রীয় বাহিনী, যাঁরা গুলি চালাল তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না কমিশন?
সামিউলের বাবা সাইফুদ্দিন জানান, তার ১২ বছরের ছেলেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মারধর করায় গ্রামের মানুষ ক্সুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। তারপর হঠাৎই গুলি চালায়। তাতে তার ছেলেও প্রাণ েযায়।
সামিউল হকের দিদি জানান, সকালে বাবা, মায়ের সঙ্গে তাঁর দুই ভাই ভোট দিতে বুথে গিয়েছিল। ওরা দু’জনই এবারের নতুন ভোটার। তাই ভোট দেওয়া নিয়ে খুব উৎসাহী ছিল। বাড়িতে আলোচনা করত জীবনের প্রথম ভোট নিয়ে। কাজির মোড়ে একটা সাইবার কাফে চালাত। কিন্তু সেই ভোটই কাল হয়ে দাঁড়াল জীবনে। এভাবে বড় ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নেবে, তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। মানুষের ভাল ছাড়া কোনওদিন খারাপ কাজ করেনি সে। তিনি জানান, ‘ভোট দিতে যাওয়ার পর ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর লোকেরা আমার ছোট ভাইকে মারধর করছিল। সেটা সহ্য করতে না পেরে বড় ভাই বাধা দিয়েছিল। এটাই নাকি ওর অপরাধ! কেন্দ্রীয় বাহিনীর লোকেরা পেছন থেকে গুলি করে ভাইকে। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, একেবারে প্রাণে মেরে ফেলার মতো কোন দোষ করেছিল আমার ভাই!, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাই দোষী জওয়ানের ফাঁসির দাবি তোলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানো আর একজন হামিদুল মিয়া ছিলেন একজন পরিযায়ী শ্রমিক। মাথাভাঙ্গায় অনেক সময় রাজমিস্ত্রি কিংবা সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করতেন। সিকিমেও যেতেন কাজের জন্য। বাড়িতে রয়েছে তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী এবং একটি তিন বছর বয়সী সন্তান। হামিদুলের শাশুড়ি মফিয়া বিবি বলেন, “আমরা আমার জামাইয়ের দেহ দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আমার মেয়ে এবং তার তিন বছরের বাচ্চাদের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। কোনও কিছু করেই তো আর ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমাদের এই কষ্ট, যন্ত্রণা সারাজীবনেও ভুলব না।আর এক নিহত নুর আলমও শ্রমিক। বিহারের পরিবারের সঙ্গে সেও ইট শ্রমিকের কাজ করত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct