আপনজন ডেস্ক: চতুর্থ দফার বিধানসভা নির্বাচন রক্তাক্ত হল শনিবার। কোচবিহারের দুটি এলাকায় মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতির গুলিতে। কিন্তু অন্য চারজনের মৃত্যু হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই গুলি চালিয়ে চার ব্যক্তিকে হত্যা করার পিছনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর যে চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন তারা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের গোলেনাহাটির জোড়পাটকি ১২৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে যে চারজন নিহত হয়েছেন তারা হলেন নুরুজ্জামান (২৮), হামিদুল মিয়া (৩০), নুর আলম মিয়া (২১) এবং সামিউল হক (২০)। তারা সকলেই জোড়পাটকি বুথের বাসিন্দা। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আত্মরক্ষার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে। তারাদের বক্তব্য, গ্রামবাসীরা সেখানে নাকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে সংবাদ সংস্থা আইএনএস জলপাইগুড়ি রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি আন্নাপ্পআ ই-র বক্তব্য তুলে ধরে জানিয়েছেন, একজন ১৪ বছর বয়সি ছেলে, যে তার মায়ের সাথে ভোটকেন্দ্রে এসেছিল। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন কাছাকাছি অবস্থিত একটি কিউআরটি (কুইক রেসপন্স টিম) ভ্যানটি ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হঠাৎ এই ঘটনাটি একটি গুজব জাগিয়ে তোলে যে ছেলেটিকে গুলি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং শত শত লোক বুথের চারপাশে জড়ো হতে শুরু করে তারা আন্দোলন শুরু করে। এরপরই তারা পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে জানান ডিআইজি। সেই সঙ্গে বলেন, সিআইএসএফ জওয়ানরা গুলি চালালে চারজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, শীতলকুচির একই অঞ্চল গোলেনাহাটির পাঠানটুলিতে দুষ্কৃতিদের গুলিতে প্রথম বারের ভোটার আনন্দ বর্মন (১৮),এক যুবকের মৃত্যু ঘটেছে।
এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন বুথে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে বিশেষ পর্যবেক্ষক ও সিইও আরিজ আফতাবের কাছে বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে একটি প্রতিবেদন চেয়ে পাঠায়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক কিশোর তার মায়ের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে আসায় জওয়ানরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ। এমনকী সে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন জওয়ানদের ভূমিকার। আর সেজন্যই মুসলিম ভোট নষ্ট করার লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবেই উপর গুলি চালানো হয়েছে।
তাদের আরও অভিযোগ, এই বুথে বরাবরই ব্যাপক ভোটে হেরেছে বিজেপি। কোনও নির্বাচনে পাত্তা পায় না। এখানে বামেদেরে প্রভাব। তাই বিজেপি সেই রোষে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে, তা মানতে নারাজ বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন।
যদিও এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীনভাবে নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারের মেয়াদ ৪৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৭২ ঘণ্টা আগে শেষ করার নোটিশ জারি করেছে। সেই সঙ্গে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শীতলকুচিতে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা প্রবেশ করতে পারবে না বলেও নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে শনিবার বিকেলেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন। তবে, নির্বাচন কমিশনের নোটিশ জারির ফলে তিনি শীতলকুচিতে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে, যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী তা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এর পিছনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি তদন্ত করে দেখবে আসলে কি হয়েছিল। কেন মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠল বাংলার মাটি। সেটাই ভাবাচ্ছে মুসলিমদেরও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct