দিলীপ মজুমদার: শাসক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর একটা মুখের সন্ধানে ছিলেন তাঁরা। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটা নাম ভেসে বেড়াচ্ছিল। সেসব নামে তেমন জমল না। তারপরে ভাসতে লাগল দাদার নাম। দাদা মানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু সব কাঁচিয়ে দিল রোগ। দাদার হৃদরোগ। সবাই আশা করেছিলেন ব্রিগেডের সভায় দেখা যাবে দাদাকে। না, তিনি এলেন না।
দাদার বদলে এলেন দাদু। এটা আমার কথা নয়। কোন অভিনেতাকে দাদু সম্বোধন করা আমার ধাতে নেই। আমার কাছে তাঁরা চির তরুণ।
এই তারুণ্য বজায় রাখতেই তো সুচিত্রা সেন বহু বছর কাটিয়ে দিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। কাল ব্রিগেডের সভায় যিনি এলেন, তাঁকে ‘দাদু’ বলেছেন নেট দুনিয়ার কিছু রসিক মানুষ, বলেছেন ‘দাদার বদলে দাদু’র কথা। মিঠুন চক্রবর্তীর বয়স সত্তর। বয়েসের বিচারে তাঁকে দাদু বললে ব্যাকরণ অশুদ্ধ হয় না।
চির চলমানতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। রবীন্দ্রনাথের সেই কথা। শুধু ধাও শুধু ধাও শুধু বেগে ধাও / উদ্দাম উধাও / ফিরে নাহি চাও। মিঠুন চক্রবর্তী মশায় চলার আনন্দবেগে চলেছেন। প্রথম যৌবনে তিনি ভিড়েছিলেন নকশালপন্থীদের সঙ্গে। তারপরে চলে এলেন সিপিএমে। সুভাষ চক্রবর্তী মশায়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। তারপরে সিপিএমের পতনের পরে তিনি চলে এলেন তৃণমূলে। দিদির ছত্রচ্ছায়ায়। এখন আবার তৃণমূলের ভঙ্গুর দশা। দীর্ঘদিনের নীরবতা ভঙ্গ করে তিনি চলে এলেন ব্রিগেডে। তার আগে অবশ্য সলতে পাকানোর পর্ব ছিল। মোহন ভাগবতের সঙ্গে আলোচনা। নিন্দুকেরা একে দল বদল বলছেন। আমার তা মনে হয় না। রামকৃষ্ণ বলেছেন না : যত মত তত পথ ! মিঠুন চক্রবর্তী মশায় নানা মতকে চেখে চেখে দেখছেন। কোনটা আসল কোনটা নকল। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের কথাও তো তাই। এ বিশ্বে সবই আপেক্ষিক।
কাল ব্রিগেডে মিঠুনকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস ছিল। অন্য তারকারা একটু অনাদৃত হয়ে পাশের মঞ্চে বসলেও মিঠুন বসেছিলেন মূল মঞ্চে। কারণ তিনি তারকা ‘মহাগুরু’।
তবে তিনি বোধহয় অনুভব করেছিলেন যে এ যুগে নেতার মতো বৃহৎ অভিনেতা আর কেউ নয়। তাই ব্রিগেডের মঞ্চে মূল তারকা নরেন্দ্র মোদি। ‘বহিরাগত’ বলে খুব রব উঠেছিল। মিঠুনকে রঙ্গমঞ্চে নামিয়ে দিয়ে তাঁরা খারিজ করে দিলেন সে প্রচার।
তৃণমূল একটা স্লোগান চালু করেছিল ‘বাংলা চায় বাংলার মেয়েকে’। এবার মিঠুনকে পেয়ে বিজেপি চালু করবে নতুন স্লোগান : ‘বাংলা চায় বাংলার ছেলেকে’।
সিনেমার চমকানো সংলাপ বলে জমিয়ে দিয়েছিলেন মিঠুন। ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’, ‘আমি জাত কেউটে’ এসব। সিনেমার এসব ডায়লগ বাস্তবায়িত হয় কি না, তা দেখার গভীর আগ্রহ নিয়ে আমরা অপেক্ষা করে আছি। নেতা যে উত্তম অভিনেতা হতে পারেন, তা আমরা দেখেছি; এবার দেখতে চাই অভিনেতা নেতা হয়ে উঠতে পারেন কি না!
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct