মোদাসসার নিয়াজ: ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি রাজ্য হল কেরল। দক্ষিণের এই প্রদেশে প্রতি ৫ বছর অন্তর নিয়ম করে পালাবদল হয়। সাধারণত এটাই এখানকার কয়েকদশকী পরম্পরা বা ঐতিহ্য। এবার পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির সঙ্গে কেরলেও বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ৬ এপ্রিল একদফায় ভোট হবে। ফলাফল ঘোষণা হবে প্রায় একমাস পর, ২ মে। প্রাক নির্বাচনী পূর্বাভাস যেটুকু পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ৪ দশকের মিথ ভেঙে এবার পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে পারে বামজোট। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সাল থেকে কেরলে বাম কিংবা কংগ্রেস কেউই দ্বিতীয়বার ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। সি-ভোটার সমীক্ষা বলছে, ম্যাজিক ফিগার ৭১ টপকে সর্বোচ্চ ৭৮ আসন পেয়ে পুনরায় বাজিমাত করতে পারে বামেদের মিলিজুলি সরকার।
অবশ্য কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএম-এর ভোট রাজনীতির রণকৌশল সম্পূর্ণ বিপরীত। পশ্চিমবঙ্গে এই দুই দলের দোস্তি হলেও কেরলে কুস্তি। বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধে লড়লেও কেরলে তারা পরস্পরের প্রথম ও প্রধান শক্র। আবার কেরলে কংগ্রেসের ইউডিএফ-এর শরিক হিসেবে রয়েছে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বাম দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গে তারা বাম ব্রিগেডে থাকলেও কেরলে কংগ্রেসের হাত ধরে রয়েছে। আর এই কাটাকুটির খেলায় কংগ্রেস চাইছে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের বিরুদ্ধে ফঃবঃ-এর শীর্ষনেতা জি দেবরাজনকে দাঁড় করাতে। যদিও দেবরাজন এই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে সাফ বলেছেন, সর্বভারতীয় পর্যায়ে সিপিএম-এর সঙ্গে বামজোটের শরিক তারা। তাই বিজয়নের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। এতে দেশের বাম মনস্কদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
তবে প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বাণীকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের দাবি, গত ৫ বছর যেহেতু এলডিএফ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, স্বভাবতই এবার কংগ্রেসের পাল্লা এবার ভারী। তবে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন বাম জোট সরকার যে এবার খুব একটা ব্যাকফুটে নেই, তা ঠারেঠোরে স্বীকার করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। কারণ বিশেষ করে অতিমারী করোনা ও তার জেরে লকডাউনের সময় এলডিএফ সরকার যেভাবে রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে, তা থেকেই তাদের আশা কেরলবাসী এবার বিজয়ন সরকার থেকে মুখ ফেরাবে না। অন্যদিকে বিজেপিও কেরলে দাঁত বসাতে চেষ্টার কসুর করছে না। বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতিতে শান দিতে তারা এবার উত্তরপ্রদেশের মডেলে কেরলেও লাভ জিহাদ নিয়ে জলঘোলা করছে। যদিও গতবার নির্বাচনে কেরলে প্রথমবার খাতা খোলে বিজেপি। মাত্র একটা আসনে জয়ী হয়েই তারা যেন নতুন ইতিহাস রচনা করে ফেলেছে বলে দাবি করে। উল্লেখ্য, গতবার পশ্চিমবঙ্গেও মাত্র ৩টি বিধানসভা আসনে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু বামেদের লালদুর্গে হুল ফোটানোকে বিরাট সাফল্য বলে মনে করে গেরুয়া শিবির।
এদিকে কংগ্রেস এবার ১৪০ আসনে কেরল বিধানসভায় ৯২ আসনে লড়ছে। রবিবার তারা ৮৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। এবার তাদের বড় মুখ বলতে বিধানসভার পরিষদীয় দলনেতা রমেশ চেন্লিথালা, প্রদেশ সভাপতি এম রামচন্দ্রন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চাণ্ডি প্রমুখ। রবিবার ইউডিএফ জোটের প্রধান শরিক দল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলে দেখা যায়, তাতে না নেই প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী লতিকা সুভাষের। তাই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও হাইকমান্ডের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে পদত্যাগ করেন লতিকা। এতেই ক্ষান্ত না হয়ে বা রণে ভঙ্গ না দিয়ে তিরুবন্তপুরমে প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরের সামনে চুল কেটে মাথা মুড়িয়ে অভিনব প্রতিবাদে সোচ্চার হন লতিকা। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭ আসন জিতেছিল বামজোট। সেবার কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে যায় ৪৭ আসন। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বামেদের। ২০-র মধ্যে মাত্র একটা আসনে জয়ী হয় বামজোট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct