দিলীপ মজুমদার: ফেভারিট কেবিনের চায়ের আড্ডায় আমরা জনা সাতেক বন্ধু জড়ো হই রোজ সন্ধের দিকে। আমাদের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের সমর্থক আছে। রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়। চিৎকার চেঁচামিচি যে হয় না তা নয়। কিন্তু মতান্তর মনান্তরে গড়ায় না। হাতাহাতা লাথালাথির প্রশ্ন নেই। দলের সক্রিয় সদস্য থাকলে তা হত। দলের সক্রিয় সদস্যরা বেশ গোঁড়া আর অন্ধ হয়। অন্যের কথা, অন্যের যুক্তি শুনতে চায় না।
আজ চায়ের আড্ডায় প্রথম মুখ খুলল সমরেশ। বলল, একটা ভালো জিনিস বন্ধ হয়ে গেল, বুঝলি?
আমরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। ভালো জিনিসটা কী জানতে চাইলাম।
সমরেশ বলল, গো-বিজ্ঞানের পরীক্ষা।
রণধীর বলল, গো মানে তো গরু। ‘গরু বিজ্ঞান’ আবার কী রে?
সমরেশ বলল, প্লিজ, গরু নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করিস না। এ গরু সে গরু নয়। আমরা কোন নির্বোধ , বিচার-বিবেচনাহীন লোককে ‘গরু’ বলে সম্বোধন করি। এই ‘গরু’ সম্বোধনের মধ্যে একটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ব্যাপার আছে। এতে গরু নামক অবলা প্রাণীটির অবমূল্যায়ন করা হয়।
সুকান্ত বলল, গরু যে উপকারী প্রাণী তা সবাই স্বীকার করে। কিন্তু তাই বলে গরুর দুধে সোনা আছে, কিংবা গোবর পরমাণু বিকিরণ ঠেকাতে পারে কিংবা গরুর পেচ্ছাব পান করলে করোনা সেরে যাবে, এসব বোগাস কথা।
সমরেশ বলল, আরে, সেসব পরীক্ষার জন্যই তো গো-বিজ্ঞানকে আনতে চাইছিল সরকার।
আমি বললাম, তুই গো-বিজ্ঞানের ব্যাপারটা একটু খুলে বলত।
সমরেশ বেশ গম্ভীরমুখে বলতে লাগল, গরু নিয়ে মানুষের চেতনা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছিল ইউজিসি। দেশের ৯০০ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরীক্ষা নিতে বলেছিল। সাড়া পড়েছিল ব্যাপক। শুনলে অবাক হবি, অনলাইনে এক ঘন্টার সেই পরীক্ষার জন্য নাম লিখিয়েছিল ৫ লক্ষ মানুষ। তাও দু-এক দিনের মধ্যে।
২৫ ফেব্রুয়ারি সেই পরীক্ষা হবার কথা। কিন্তু আজ রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগের ওয়েবসাইটে দেখলাম সে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
অরুণ বলল, কেন, পরীক্ষা বন্ধ হল কেন?
-ওয়েবসাইটে পরীক্ষাবন্ধের কোন কারণ লেখা নেই। তবে অনুমান করতে পারি। আসলে এ নিয়ে বিরোধীরা হইচই শুরু করেছিলেন।
রণধীর বলল, তোরা শ্রীরাম আর গরুতে আটকে গেলি কেন বলতো !
রণধীরের কথা শুনে সমরেশ একটু রেগে উঠল, তোর কথার ভাঁজ ভালো নয়। আটকে যাও্য়া বলতে কী বোঝাতে চাইছিস।
-একজন পৌরাণিক মানুষ আর একটা প্রাণীকে মূলধন করলি কেন ?
সুকান্ত বলল, যাই বলিস, এই মূলধন করার ব্যাপারটা পাকা মাথার কাজ। খুব কাজ দিয়েছে এই মূলধন। জয় শ্রীরামে দেশের মানুষ মাতাল। দিকে দিকে গোমাতার সেবায় দেশের মানুষ উদ্বেল।
সমরেশ বলল, গোমাতাকে নিয়ে তোদের এই ঠাট্টা-ইয়ার্কি একদম চুপসে যেত, যদি গো-বিজ্ঞানের চর্চা গতি পেত। কিন্তু আত্মঘাতী মানুষ তো সে চর্চাকে আঁতুড়ঘরেই গলা টিপে হত্যা করতে চায়।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct