আপনজন ডেস্ক: দেশের মানুষ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত এই অভিযোগে ইয়েমেনের বহু বিক্ষুব্ধ মানুষ ঘেরাও করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ। ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী এডেনে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে তাণ্ডব চালিয়েছে ক্ষুব্ধ ইয়েমেনি বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘ সমর্থিত সরকারের রাজধানীতে অবস্থিত মাশিক প্রাসাদে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা।
বার্তা সংস্থা সূত্র জানায়, গণ পরিষেবার অপ্রতুলতা, জীবনযাত্রার নিম্নমান ও স্থানীয় মুদ্রার মানের ক্রমাগত অবনতির জেরে এই বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। তবে বিক্ষোভকারীরা আমিরাত সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) অনুগত বাহিনীর কাছ থেকে কোনো বাধা পায়নি।
অন্য ষূত্র জানাচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই বিক্ষোভ আয়োজন করেছেন যাদের নয় মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি।
জানা গেছে, ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী মইন আবদুল মালিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের অন্য সদস্যরা ওই প্রাসাদে অবস্থান করছিলেন।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই এডেনের পুলিশ প্রধান জেনারেল মুতাহের আল-শুআইবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং বিক্ষোভকারীদের স্থান ত্যাগ করতে সম্মত করেন।
আলশাইয়াল বলেন, রাষ্ট্রসংঘ সমর্থিত সরকারের এই সদর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে সৌদি সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাহির থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের সদস্যরা পাহারায় ছিল। তত্ত্বগতভাবে তা সৌদি আরবের সমর্থনে হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে আসছে যারা সানা থেকে আলাদা হওয়ার আহ্বান করে আসছে।’
এদিকে ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলীয় হাদরামাউত প্রদেশের সাইউন শহরে ভিন্ন এক বিক্ষোভে এক সরকারী ভবনে বিক্ষোভকারীরা তাণ্ডব চালায়। ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থিত সরকারের অনুগত বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।
বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে
দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।
পাঁচ বছরের বেশি সময় চলমান এই গৃহযুদ্ধে হাউছি নিয়ন্ত্রিত সানাকেন্দ্রীক উত্তর ইয়েমেন ও বন্দর নগরী এডেনকেন্দ্রীক দক্ষিণাঞ্চলীয় সরকারের অধীন দক্ষিণ ইয়েমেনে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
গত বছর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি মধ্যস্থতায় দক্ষিণের সব শক্তিকে একত্রিত করে নতুন এক ঐক্য সরকার গঠন করা হয়।
উত্তরে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি ও আমিরাতের সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এসটিসিকে একত্রিত করে এই সরকার গঠিত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct