ফৈয়াজ আহমেদ: হোমাই ভিয়ারাওয়ালা(৯ই ডিসেম্বর ১৯১৩ – ১৫ই জানুয়ারি ২০১২), সাধারণত ডালডা ১৩ ছদ্মনামে পরিচিত, ভারতের একজন প্রথম মহিলা চিত্র সাংবাদিক।তিনি ১৯৩০ এর দশকের শেষ দিকে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে, তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন, যেটি ভারত প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়ায় যোগ দেবার পর, তিনি হলেন মূলধারার প্রকাশনায় যোগ দেওয়া প্রথম ভারতীয় নারী।
হোমাই ভিয়ারাওয়ালা ১৯১৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর গুজরাতের নভসারিতে একটি পারসি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার ভ্রাম্যমান থিয়েটার কোম্পানির সাথে নানা জায়গা ঘুরে তার শৈশব কেটেছে। বোম্বে চলে যাওয়ার পর, হোমি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্যার জে. জে. স্কুল অফ আর্ট থেকে পড়াশোনা করেছেন।
হোমি বিবাহ করেছিলেন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার হিসাবরক্ষক এবং চিত্রগ্রাহক মাকেনশ জামশেদজী ব্যারাবালাকে। ১৯৭০ সালে, তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পর, তিনি চিত্রসাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি নতুন প্রজন্মের পাপরাজ্জি সংস্কৃতির সঙ্গে কাজ করতে চান নি।
হোমি এরপর রাজস্থানের পিলানিতে চলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন তার একমাত্র পুত্র ফারুক, যিনি বিটস পিলানিতে পড়াতেন। ১৯৮২ সালে তিনি তার পুত্রের সঙ্গে বড়োদরা (পূর্বের বরোদা)য় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালে ক্যান্সারে তার ছেলের মৃত্যুর পর, তিনি বরোদায় একটি ছোট কামরায় একা থাকতেন এবং বাগান করে সময় কাটাতেন।
হোমি ১৯৩০ এর দশকে তার কর্মজীবন শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, তিনি মুম্বাই ভিত্তিক দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার জন্য প্রদেয় দায়িত্বের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে তার সবচেয়ে প্রশংসিত, অনেক সাদা কালো ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। তার কর্মজীবনের প্রথম দিকে, যেহেতু হোমিকে কেউ জানতেননা এবং তিনি একজন মহিলা ছিলেন, তার তোলা ছবি তার স্বামীর নামে প্রকাশিত হ্ত।
অবশেষে, তার তোলা ছবি জাতীয় পর্যায়ে নজরে কাড়ে, বিশেষ করে ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ তথ্য পরিষেবাদিতে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লীতে যাওয়ার পর। একজন সংবাদ চিত্রগ্রাহক হিসেবে, স্বাধীনতা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে, তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, জওহরলাল নেহ্রু, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ইন্দিরা গান্ধী এবং নেহরু-গান্ধী পরিবার সহ অনেক রাজনৈতিক এবং জাতীয় নেতাদের ছবি তোলেন।
১৯৫৬ সালে, তিনি লাইফ ম্যাগাজিনের হয়ে চতুর্দশ দলাই লামার ছবি তোলেন, যখন তিনি নাথু গিরিবর্ত্ম হয়ে প্রথম ভারতের সিকিমে প্রবেশ করেছিলেন।
তার বেশিরভাগ ছবি “ডালডা ১৩” ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। তার এই নামের পছন্দের পিছনে কারণ ছিল এই যে, তার জন্মসাল ছিল ১৯১৩, ১৩ বছর বয়সে স্বামীর সাথে তার প্রথম দেখা হয় এবং তার প্রথম গাড়ির নম্বর ছিল “ডিএলডি ১৩”
১৯৭০ সালে, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই, হোমি চিত্রগ্রাহকতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, নতুন প্রজন্মের আলোকচিত্রীদের “খারাপ আচরণ”এর জন্য। তিনি তাঁর জীবনের শেষ ৪০ বছরের বেশি সময়ে একটিও ছবি তোলেননি। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হত, তাঁর পেশার শীর্ষে থাকার সময় তিনি কেন চিত্রগ্রাহকতা ছেড়ে দিলেন, তিনি বলতেন “এটার আর কোন মূল্য নেই। আমাদের, আলোকচিত্রীদের জন্য নিয়ম ছিল; আমরা এমনকি, যথাযথ পোষাক পরিধান রীতি-নীতি অনুসরণ করতাম। আমরা একে অপরকে সম্মান করতাম, সহকর্মীদের মত ব্যবহার করতাম। কিন্তু তারপর, সব কিছু খুব খারাপ দিকে পরিবর্তিত হয়ে গেল। তারা শুধুমাত্র দ্রুত কিছু পয়সা রোজগারে উৎসাহী হয়ে পড়ল; আমি আর এই ভিড়ের অংশ হতে চাই নি।”
জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে, হোমি, দিল্লি ভিত্তিক আলকাজি ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস কে, তাঁর ছবির সংগ্রহ দান করেন এবং, ২০১০ সালে, মুম্বইএর ন্যাশানাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট (এনজিএমএ) এর সহযোগিতায়, সংস্থাটি তাঁর কাজের একটি প্রতিক্ষেপক উপস্থাপন করেছে। গুগল, হোমিকে তাঁর ১০৪ তম জন্ম বার্ষিকীতে, একটি ডুডল “লেন্স নিয়ে প্রথম মহিলা” দিয়ে সম্মানিত করেছে।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে, হোমি তার বিছানা থেকে পড়ে যান এবং তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তার প্রতিবেশীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তিনি ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন, যার ফলে ১৫ই জানুয়ারী ২০১২ সালে তার মৃত্যু ঘটে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct