নাজিম আক্তার, চাঁচল: বয়সের ভারে মাথার চুল পেকে সাদা হয়েছে বৃদ্ধার। বয়স হয়েছে ৮২ বছর। তিন বেলা খাবার জোটানোও তাঁর জন্য কষ্টকর।জীবনের শেষ সময়ে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরপাক খাচ্ছেন সমিজান। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দরবারে ঘুরেছেন, সবাই দিয়েছে আশ্বাস কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। আশ্বাসের ঢেউয়ে এখনো জোটেনি বয়স্কভাতা।
ওই বৃদ্ধা সমিজান বেওয়ার বাড়ি মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলপুকুর গ্রামে।সন্তানহীন ওই বৃদ্ধার স্বামী ২৫ বছর আগেই মারা গেছে।একাকিত্বেই গ্রামবাসিদের কাছে কখনও সাহায্য আবার কখনও ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন গুজরান করে আসছেন।
সমিজানের মুখ থেকে জানা গেল,এই পযর্ন্ত তার তিনটি ঠিকানা হয়েছে।জন্মভিটে ওই পঞ্চায়েত এলাকার খদিয়ারপুর গ্রামে।তার যখন ছয় মাস বয়স মা মারা যায়।সেখানেই লালন পালনের পর বিয়ে হয় ওই পঞ্চায়েত এলাকার ভেবা-ডারকান্দি গ্রামে।সেখানও সন্তানহীনত্বে স্বামীকে হারাতে হয়।তারপরেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বেলপুকুর গ্রামে।জীবনের কঠিন সংগ্রাম করে তিনি সেখানেই দিন গুজরান করছে।তবে ৮২ বছরেও মেলেনি বয়স্ক ভাতা।আধার ও ভোটার কার্ড অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী,বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ৬০ বছর।সে অনুযায়ী সমিজান বেওয়া বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এত দিনেও কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি বলে ক্ষোভ।ভোট আসে ভোট যায়,২০ বছরে নেতা মন্ত্রীর চেয়ার বদলেছে তবুও অধরা সমিজানের বয়স্ক ভাতা।ভোট আসলেই নেতারা বাড়িতে গিয়ে আশ্বাস দেয় বলে সমিজান জানালেন।তবে এবার ভাতা না হলে গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ না করা ইচ্ছা প্রকাশ জাগছে ৮২-এর ওই বৃদ্ধার।
এলাকাবাসী রাজু সেখের কথায় জানা গেছে,সমিজান বেওয়ার স্বামী ‘আলি’ মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। সহায়-সম্পদ বলতে একখণ্ড লোকের জায়গাই অস্থায়ী বাড়ি ছাড়া তাঁর তেমন কিছু নেই। সংসারজীবনে শূন্য সদস্য। এখন তিনি মামাতো ভাই মুকসেদ আলির ভিটেতে থাকেন। মামাতো ভাইরা খেতমজুর ও শ্রমজীবী।
সমিজান বলেন, ২০ বছর ধরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের ধরে দরবার করে আসছি। এমনকি পঞ্চায়েতের চৌকাটেও অনেকবার আবেদন করেছি। তবুও অধরা ভাতা। বয়সের ভারে ব্লক দপ্তরেও যাওয়া হয় না। আর ভোট আসলেই নেতাদের ঝাঁক পড়ে যায় বাড়িতে। তখন তারা হাসিমুখে আশ্বাস দেয়। তারপরে আর কোনো খোঁজ নেয়না। এবার ভোট টা দিব কি না তা ভাবছি বলে জানিয়েছেন সমিজান। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যেবিলকিস বেগমের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান জানাচ্ছেন,এলাকার অনেকেরই ভাতা হচ্ছে। তবে তিনি বারবার আবেদন করেও মিলছে না।পঞ্চায়েতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
৮২ বছরেও কেন হয়নি বার্ধক্য ভাতা,ঘটনার খবর জানতেই ক্ষুদ্ধ বিরোধীরা।উল্লেখ্য চাঁচল-১ নং ব্লকের ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতই শাসকদলের দখলে।
সেই মোতাবেক ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটিও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত।
তবে মালদা জেলা বিজেপি কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর রাম দাবি করে বলেন,শুধু সমিজান বেওয়া নন!এই ভাবে ব্লক এলাকার শতশত প্রান্তিক বৃদ্ধ মানুষ এই বঞ্চনার শিকার।তৃণমূলের আমলে এমনটাও থাকলে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসলে অসহায় বঞ্চিত মানুষদের পাশে থেকে তাদের সমস্যা দূর করবে।
পাল্টা জবাবে মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম বলেন,বিজেপি মানুসের পাশে দাড়াই না।ওরা গন্ডোগোল পাকাতেই ব্যস্ত।মানূষের পাশে তৃণমূল সরকার সর্বদা রয়েছে ও থাকবে।বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বাংলা আর বাংলা থাকবে না।আমি ওই বৃদ্ধা সমিজান বেওয়ার দুর্দদশার কথা জানতে পেরেছি।আমরা পরিদর্শনে যাব এবং তার ভাতার ব্যবস্থা করে দিব বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সামিউল ইসলাম।
বিধানসভা নির্বাচনের আবহে সব রাজনৈতিক দল নিজের ভীত শক্ত করে ব্যস্ত।বিরোধী-শাসকের তর্জার গোটা রাজ্য যখন উত্তপ্ত তখন মিলবে কি ৮২ -এর বৃদ্ধা সমিজান বেওয়ার বার্ধক্য ভাতা।এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় গোটা এলাকাবাসি।
চাঁচল-১ নং ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য্য অবশ্য জানিয়েছেন,ভোট প্রক্রিয়া মিটে গেলে ব্লক দপ্তরে আবেদন করলে গুরুত্ব সহকারে ভাতা প্রদানের বিষয়টিতে নজর দেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct