ফৈয়াজ আহমেদ: মোমবাতির ব্যবসা একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। তাই আপনি যদি খুব দক্ষতার সাথে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন তবে আপনি খুব তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত একজন উদ্যোক্তা হতে পারবেন।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে মোমবাতি অন্যতম। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে এর কদর রয়েছে। অল্প খরচে আলো পেতে মোমবাতি খুবই উপকারী পণ্য। মোমবাতি আলো দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, জন্মদিন, এমনকি শোপিস হিসেবে নানা রং ও আকৃতির মোমবাতি ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয় আজকাল রেস্টুরেন্ট গুলোতেও ক্যন্ডেল লাইট ডিনারের অন্যতম সেরা সরঞ্জাম মোমবাতি। অর্থাৎ এর চাহিদা রয়েছে। তাই মোমবাতি তৈরির ব্যবসায় যুক্ত হতে পারেন আপনিও। বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
এই ব্যবসা শুরু করতে তুলনামুলকভাবে অনেক কম পুঁজির দরকার পরে। খুব সহজেই মোমবাতি বানানো শেখা যায়। মোমবাতি বানানোর কারখানা অল্প জায়গাতে আরম্ভ করা যায়। তাই শহর বা গ্রামে সব জায়গায় এই ব্যবসা করা যায়। কোন কর্মী না রেখে পরিবারের সবাই মিলে ব্যবসাটি পরিচালনা করা সম্ভব।
মোমবাতি বানানোর উপকরণ
ডাইস, প্যারাফিন, কড়াই, পাত্র, ছুরি, কাঁচি, চামচ, মগ, বালতি, তুলি, স্টোভ প্রভৃতি দিয়ে আজকাল নিত্য নতুন মোমবাতি হাতেই বানানো হচ্ছে।
কাঁচামাল
সাদা মোম, ইস্টারিক এসিড, সুতা, রং, সয়াবিন তেল, প্যাকেট, লেবেল, আঠা প্রভৃতি জিনিস দিয়ে মোমবাতি বানানো হয়ে থাকে।
মোম তৈরির পদ্ধতি
প্রথম ধাপ: মোম তৈরির ডাইস বা ছাঁচের দুটি অংশ একটি ছিঁটকিনি দিয়ে আটাকানো থাকে। এবং ডাইসের ভিতরে মোমবাতি আকৃতির কত গুলো খাঁজ থাকে। প্রথমে ডাইসের ছিটকিনি খুলে ছাঁচের দুইটি অংশ আলাদা করতে হবে। এরপর একটি কাপড়ে তেল নিয়ে ডাইসের ভিতরে থাকা খাঁজগুলো ভালো ভাবে মুছে নিতে হবে, যাতে করে মোমগুলো খুব সহজে বের করা যায়।
দ্বিতীয় ধাপ: ছাঁচের মধ্যে সলতে পরানোর জায়গা রয়েছে। সলতেগুলো উপর থেকে নিচ পর্যন্ত টান টান করে বেঁধে দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ: এরপর ছাঁচের ২টি অংশ এক সাথে আটঁকে দিতে হবে এবং ছাঁচের সাথে লাগানো জলের ট্যাংকে জল ভরতে হবে। কারণ জল ভরা থাকলে গরম মোম ঠান্ডা হতে সহজ হয়।
চতুর্থ ধাপ: এবার চুলায় কড়াই বসাতে হবে। কড়াই গরম হলে তার মধ্যে সাদা শক্ত মোম (প্যারাফিন) দিতে হবে। মোম পুরোপুরি গলে যাবার আগেই কড়াইতে ১০ ভাগ মোমের সাথে ১ ভাগ স্টিয়ারিক এসিড মিশাতে হবে।
পঞ্চম ধাপ: প্যারাফিন গলে যাবার পর বেশিক্ষণ চুলায় রাখা যাবে না। কারণ গলে যাওয়া প্যারাফিন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে।
ষষ্ঠ ধাপ: গলা মোম মগে বা চামচে করে আস্তে আস্তে মেশিনের খাঁজগুলোতে ঢালতে হবে।
সপ্তম ধাপ: মোম ঢালার খাঁজটি যতক্ষণ না পুরোপুরিভাবে ভরবে ততক্ষণ পর্যন্ত মোম ঢালতে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মোম ঢালার সময় খাঁজের ভেতরে যেন কোন ফাঁকা থেকে না যায়।
অষ্টম ধাপ: ২০/২৫ মিনিট পর মোমগুলো ঠান্ডা হলে ছাঁচের ২টি অংশ আলাদা করে মোমগুলো বের করে আনতে হবে। নবম ধাপ: এবার মোমের সলতের বাড়তি অংশগুলো সাইজ মত কাটতে হবে এবং মোমবাতি ভালোভাবে বসানোর জন্য নিচের অংশের তলাটি সমান করে কাটতে হবে। বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা মোম তৈরির জন্য সেই অনুযায়ী ছাঁচ তৈরি করতে হয়।
সাবধানতা
স্টিয়ারিক এসিড মোমের সঙ্গে মেশানোর সময় সাবধান থাকতে হবে। মোম চুলায় কড়াই থাকা অবস্থায় রং মেশানো যাবে না। চুলা থেকে নামিয়ে রং মেশাতে হবে। মোমবাতি তৈরির সময় অবশ্যই শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। যাইহোক মোমবাতি বানানোর কাজ শেষে মোমের ছাঁচটি পরিষ্কার করে রাখলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কেমন পুঁজি দরকার পরে
পুঁজির বিষয়টা আসলে আপনি কতটা বড় করে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তার উপরে নির্ভর করে আপনি যদি ব্যবসাটা খুব বড় করে শুরু করতে চান তবে অধিক পুঁজির প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও যদি মেশিন দিয়ে মোমবাতি বানানোর কাজ সমাধা করতে চান তবে মেশিন কেনার খরচা তো রয়েছেই। কারখানা জায়গাটা যদি আপনার নিজস্ব না হয় তবে কারখানা ভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ এর সকল এর দরকার হবে। যদি আপনাকে কর্মী রাখতে হয় তবে কর্মীর মাসিক বেতনের দরকার রয়েছে। আর যদি আপনি নিজে মোমবাতি বানানোর কাজে দক্ষ হন এবং নিজের কারখানা জন্য ছোট একটি জায়গা থাকে তবে খুব কম বিনিয়োগ করে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আট হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct