দিলীপ মজুমদার: অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার রায়দিঘির বিধায়ক। সেদিন তাঁকে দেখা গেল আলিপুর কোর্টে। সেখানকার মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তিনি দায়ের করলেন মামলা। মানহানির মামলা। শোভন চট্টোপাধ্যায় আর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। শোভন দেবশ্রী একদা বন্ধু ছিলেন। এখন শত্রু। শোভন দেবশ্রীকে ‘টোটো-চোর’ বলেছেন। বলেছেন ‘ডাইনি’। বলেছেন যে, যার মান আছে, তার পক্ষে মানহানির মামলা সাজে; মান তো দেবশ্রীর নেই, মাত্র ক্লাশ টেন পাশ। সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গেও নাকি দেবশ্রী জড়িত, সারদা কর্তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আয়োজন করিয়েছিলেন ডেলোতে।
মানহানির মামলা করে দেবশ্রী প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে তাঁর মান আছে। কিন্তু আলিপুর আদালতে দেবশ্রীর সঙ্গে দেখা গেল শোভনের প্রাক্তন পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। সেই প্রবাদ। শত্রুর শত্রু বন্ধু। আগে শোভনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল দেবশ্রীর। তখন রত্না ছিলেন তাঁর শত্রু। আজ শোভন তাঁর শত্রু, কারণ তিনি এখন বৈশাখীঝড়ে আক্রান্ত। বৈশাখীঝড়ে আক্রান্ত হবার পরে শোভন রত্নার থেকেও বিচ্ছিন্ন।
এখন রত্নার শত্রু শোভন। তাই দেবশ্রী এখন রত্নার বন্ধু। সেদিন আদালতচত্বরে দেবশ্রীর পাশে দাঁড়িয়ে রত্না জানালেন যে শোভনের সঙ্গে দেবশ্রীর বন্ধুত্ব থাকলেও দেবশ্রী তাঁর সংসার ভাঙার চেষ্টা করেননি; দেবশ্রী তাঁর দিদির মতো, তাঁর বিরুদ্ধে শোভনের কুরুচিকর মন্তব্য অপরাধের সমান।
আমার এসব কথা শুনে বন্ধু অভিজিৎ বলল, সব সময় শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় না।
এরকম উল্টোপাল্টা কথা বলা অভিজিতের অভ্যেস। আমি বললাম, আলবৎ হয়। ঐতিহাসিক উদাহরণ সুভাষচন্দ্র বসু। ইংরেজের শত্রু জার্মান, জাপানের সাহায্য নিয়েছিলেন সেই প্রবাদ মনে রেখে।
অভিজিৎ বলল, কংগ্রেস আর বামেদের শত্রু তো বিজেপি। ঠিক কিনা!
-ঠিক তো। আমি বললাম।
একটু মুচকি হেসে অভিজিৎ বলে, আবার বিজেপির শত্রু তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেস আর বামের বন্ধু হচ্ছে কী তৃণমূল? উল্টোদিক দিয়েও দ্যাখ। তৃণমূলের শত্রু বিজেপি। বাম- কংগ্রেসের শত্রুও বিজেপি।
কিন্তু তৃণমূল কী বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে? অভিজিতের যুক্তি খণ্ডন করতে পারলাম না। বিজেপি এরাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম-কংগ্রেসের দিকে হাত না বাড়িয়ে একা লড়াই করার গোঁ ধরে আছেন। একা কুম্ভ কী ‘নকল বুঁদিগড়’ রক্ষা করতে পেরেছিল?
বন্ধু অভিজিৎ বলল, তবে কিনা রাজনীতি বড় বিচিত্র বস্তু, বুঝলি। এই গলাগলি তো পরক্ষণে গালাগালি। গালাগালি করার পরে আবার গলাগলি। যার গু-এ দুর্গন্ধ বেরোত, সেই গু এখন সুগন্ধে ভরপুর। কত দেখলাম আমরা। তাই এখন যে শত্রু, কাল সে যে পরম মিত্র হবে দেখা দেবে না, কে বলতে পারে? এখনও কয়েক মাস বাকি ভোটের। এর মধ্যেও অনেক ভোলবদল হতে পারে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct