নাজিম আক্তার, চাঁচল: আবারও সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়ল মালদহের চাঁচলে। হিন্দুদের মন্দির নির্মাণে এগিয়ে এলেন স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। মন্দির গড়তে আর্থিক অনুদান দিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও। এ এক অনন্য সম্প্রীতির নজির গড়লেন চাঁচল থানার সিহিপুর গ্রামের মানুষ।
উল্লেখ্য, সিহিপুর বারোওয়ারি দুর্গা মন্দিরের পুনঃনির্মাণের কাজ বেশ কিছুদিন হল শুরু হয়েছে। আর সেই মন্দির নির্মাণে আট লক্ষ টাকা বাজেট রয়েছে। সেই টাকা জোগানে এগিয়ে এসেছেন চাঁচল থানার সংখ্যালঘু সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ।
সারা দেশ জুড়ে যেখানে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চরম পর্যায়ে, সেখানে হিন্দুদের মন্দির নির্মাণে মুসলিমরা এগিয়ে আসা বুঝিয়ে দেয় দেশটা এখনও দ্বেষে ভরে যায়নি।এখনও বন্ধুতা শব্দটা অর্থহীন নয়। এখনও মানুষ বিশ্বাস করে ধর্ম একটাই, মানব ধর্ম।
সিহিপুরের দূর্গা মন্দিরের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে রবিবার। এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কাজ চলছে জোর কদমে। কিন্তু মাঝে একটা সময় অর্থের অভাবে কাজ এগোনো যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সম্পাদক কাজল দাস। ঠিক তখনই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মন্দির নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসে। নির্মানের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িতে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।তবে সেখানে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নেই। রয়েছেন হিন্দু-মুসলিম সহ সমস্ত ধর্মের মানুষই।
রবিবার চলছিল মন্দিরের ঢালাইয়ের কাজ।আর সেই উপলক্ষ্যে এলাকার পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে এক চটে বসে খিচুরি ভোগের আহার করেন।এদিন এই পুনঃনির্মীয়মাণ মন্দিরে এক সম্প্রীতির আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট জনেরা।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে ১৯০১ সালে এলাকার ডাঃ যতীশ চন্দ্র মজুমদারের ঠাকুরদা টিনের ছাউনি দিয়ে পাকা করেই মন্দিরটির নির্মাণ করেন।প্রায় ৫০ বছর মজুমদার পরিবারের উদ্যোগেই দুর্গা পূজো হয়ে আসছিল। পরিবারের সদস্যরা নিজের জীবিকা নির্বাহে অ্যান্য জেলায় চলে যান। তাদের বাড়িটিও এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ।তারপরে গ্রামবাসীরাই নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবছর দুর্গা পূজা করে আসছেন। ১২০ বছরের পুরোনো ওই মন্দিরটি ভগ্নদশা হয়ে যায়। তাই পুনঃনির্মাণ অত্যন্ত জরুরী ছিল বলে কমিটি জানিয়েছেন।
মন্দির কমিটির সুবল চন্দ্র সাহা, কাজল দাসরা জানালেন, আমাদের মধ্যে ভাতৃত্বের বন্ধন বজায় রয়েছে। মন্দিরের পুনঃনির্মাণে সবাই যে এগিয়ে আসবে ভাবতে পারিনি। আমাদের এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত মজবুত এটাই কামনা করি। গ্রামের বধূ নন্দী দাসও বলেন,আমরাও খুব খুশি।পাড়ার মন্দির নির্মানে সর্ব বর্ণের মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, সিহিপুরের রানা সেখ জানান, ধর্ম নিয়ে যখন সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ হানাহানি-হিংসাত্মক হয়ে পড়েছে। ঠিক তখনই এই ঘটনার মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হল। ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করে মানুষ কোনও দিনও এগোতে পারেনি, আগামী দিনেও পারবে না। তাই সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্তরে সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct