সেখ আব্দুল আজিম ও আব্দুস সামাদ মণ্ডল: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পূর্ব নির্ধারিত দিনেই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা কররেন ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার বিকেলের কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাঘরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ নামের নতুন দল ঘোষণা সহ দলের পতাকাও উন্মোচন করলেন আব্বাস সিদ্দিকী। নীল, সাদা ও সবুজ মেশানো পতাকায় লাল অক্ষরে লেখা আইএসএফ।
এদিন ভিড় ঠাসা সাংবাদিকদের সামনে নতুন দলের উদ্দেশ্য ও নীতি নিয়ে এক লিখিত প্রেস বিবৃতি বিতরণ করা হয়। তাতে তুলে ধরা হয় নতুন দলের ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা বজায় রাখার অঙ্গীকার। আব্বাস সিদ্দিকী এদিন সাফ জানিয়ে দেন, কোনও ধর্মীয় কর্মসূচির ভিত্তিতে নয় পুরোপুরি সংবিধানের ‘উই দ্য পিপল অফ ইন্ডিয়া’র সত্তাকে বজায় রাখতে আর্থ, সামাজিকভাবে বঞ্চিত পিছড়ে বর্গের মানুষের স্বার্থেই তার এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বোঝাতে ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’-এর সভাপতি পদে আসীন করেছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সন্তান শিমুল সোরেনকে। আর তার ভাই পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে চেয়ারম্যানের আসনে বসানো হয়েছে।
তবে, আব্বাস সিদ্দিকীর নতুন এই দলের পক্ষে যে বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছে তাতে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, দরিদ্র, অসহায় মানুষের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব সৃষ্টি করে রেখেছে। এমনকী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিভেদকামী গোষ্ঠীর বর্ণভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের ধারক ও বাহকরা পুঁজিবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অধিকাংশ ভারতীয়কে দুঃস্থ ও নিঃস্ব করে তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলি সুচতুর জাতি স্বার্থে ব্যবহার করে সাবিধানিক বহুত্ববাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যমূলক এনআরসি ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর প্রয়াস চলছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
দেশের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে রাজ্যে যে কর্মসংস্থান, অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে সে কথাও তুলে ধরা হয়। তবে আক্ষেপের সুরে এই নতুন দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দলিত (তপশিলি), আদিবাসী, ওবিসি ও মুসলিমরা কোনও রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাঙ্কে বন্দি নয়। তাই তাদের উচিত সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করা, সামাজিক ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া, সর্বোপরি সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করা। তবে, নতুন দলের বিবৃতিতে কোনও জোটের কথার উল্লেখ নেই। এমনকি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয় সম্পর্কে কোনও বাক্য ব্যয় করা হয়নি।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী, শিমুল সোরেন, শামসুর আলি মল্লিক প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct