সুলেখা নাজনীন: বছর খানেক আগে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা হিসেব যার নাম প্রায় শোনা যেত মিডিয়ায় তিনিই এখন রাজ্য রাজনীতিতে মুখ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন। এতদিন দেখা যচ্ছিল পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীই মূলত ফুরফুরা শরীফের ‘প্রকৃত’ প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছিলেন। সাম্প্রতিক কালে তার সেই ‘একচ্ছত্র আধিপত্যে’ ভাগ বসিয়েছেন তারই সম্পর্কে ভাইপো ফুরফুরার তরুণ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। এ সম্পর্কে টাটকা কিছু নমুনা সামনে আসতে শুরু করেছে।
বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দলের নেতারা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। তখন, প্রচারের আলোয় আসেননি পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে।
ত্বহা সিদ্দিকী তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এখন তার সাক্ষাৎ এড়াতে শুরু করেছেন বিরোধী কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের নেতারা। এমনকী যে ফুরফুরার পীরজাদাদের নিযে বামফ্রন্টের নেতাদের মুখে প্রায় কুলুপ আঁটা ছিল তারাও এখন মুখ খুলছেন। তবে, মিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পশ্চিমবঙ্গে এসে আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বকে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়ায় রাজ্য রাজনীতি সরগরম। লক্ষ্য একটাই কীভাবে ফুরফুরা শরীফের প্রভাবিত মুসলিম ভোটকে কাছে টানা। তাই কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক আবদুল মান্নান, অধীর চৌধুরি আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আব্বাস সিদ্দিকী যেহেতু কং-বাম জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেস হাইকমান্ডের শরণাপন্ন হয়েছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে।
রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগ যেহেতু এখনও তৃণমূলের কবজায়, তাই কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট চাইছে সেই ভোটে থাবা বসাতে। আর ওত পেতে বসে আছে বিজেপি। ভোট কাটাকাটিতে যদি তাদের কিছু আসন চলে আসে।
বলতে দ্বিধা নেই, আব্বাস সিদ্দিকী যেহেতু এক তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পরার থেকে রাজ্য সরকার বিরোধী মনোভাব নিয়েছে তাই তাকে হাতছাড়া করতে কংগ্রেস কিংবা বামফ্রন্ট নারাজ বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইদানিং তিই কংগ্রেস নেতা বারে বারে ছুটছেন আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
প্রথমে আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরি যাওয়ার পর আব্বাসের সঙ্গে সাক্সাৎ করতে গেছেন আবু হাসেম খান চৌধুরি (ডালু)। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কংগ্রেস কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে আব্বাস সিদ্দিকীকে।
তবে, প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেস চাইছে বামেদের জোটের ম্যেধ আব্বাস সিদ্দিকীর দলকে শামিল করা। কিন্তু আব্বাস সিদ্দিকীর কিছু শর্ত নাকি তাদেরকে ভাবাচ্ছে।
অন্যদিকে, আব্বাস সিদ্দিকী খুব চতুরভাবে শুধু মুসলিমদের কথা না বলে আদিবাসী ও দলিতদের সমর্থনে পিছড়ে বর্গের ভোট টানার কৌশল অবলম্বন করেছেন। এর আগে তাকে বলতে শোনা গেছে তার দল ক্ষমতায় এলে দলিত মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তাই আব্বাস সিদ্দিকীর মনোভাব আর বামেদেরে কাছেও অচ্ছ্যুৎ বলে মনে হচ্ছে না। এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে উত্তর ২৪ পরগণার সিপিএমের এক সভায় রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, অাব্বাস সিদ্দিকীকে সাম্প্রদায়িক বলে মনে হচ্ছে না তার। কারণ, তিনি নাকি সব সম্প্রদায়ের কথা বলছেন। এ সবের মধ্যে, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সমঝোতা নিয়ে বৈঠক চূড়ান্ত না হওয়ায় জল্পনা বাড়ছে তাদের জোটে আব্বাস সিদ্দিকীকে শামিল করা নিয়ে। যদিও সূত্র জানাচ্ছে যেভাবে দলিত মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে আব্বাস সিদ্দিকী শর্ত আরোপ করেছেন তাই ভেবে চিন্তে পা বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস। আব্বাস ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তারা ৮০টি আসন দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতাদের কাছে। আর সেটাই মাথাব্যথার কারণ হযে দাঁড়িয়েছে। এত আসন ছাড়লে তাদের আসনে কোপ পড়ার সম্ভাবনা। কারণ, বামফ্রন্ট নাকি গতবারের চেয়ে আসন কম নিতে রাজি হচ্ছে না। তাই বাধ্য হযে প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা কংগ্রেস হাইকমান্ড সোনিয়া গান্ধির কাছে লিখিতভাবে জানাচ্ছেন। ফলে, আব্বাস সিদ্দিকী চাইলেও বাম-কংগ্রেস জোটে তাকে শামিল করা হবে কিনা তা নির্ভর করছে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct