জাইদুল হক : পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগে শাসক দল তৃণমূল ও বিজেপি নিজেদেরকে প্রচারে নামিয়ে দিয়েছে জোরকদমে। শুরু করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা। পিছিয়ে নেই কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। তারাও জোটবদ্ধ হয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
যদিও বিধানসভা নির্বাচন কবে তা এখনও জানা যায়নি। যেহেতু নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তাই কেন্দ্রের শাসক দলের পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্রে জানা যাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিজেপি তাই ছক কষছে যাতে রাজ্যের শাসক দলকে কীভাবে তাদের ভোট ব্যাঙ্কে কিছুটা হলেও ধস নামানো যেতে পারে।
এটা প্রকাশ্য যে ভোট কাটাকাটির খেলায় বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চায়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিজেপি সেই ভোটের হার কমানোর পরিকল্পনা করছে বলে বিশেষ সূত্র জানাচ্ছে। এ ব্যাপারে গত লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করা ইতিমধ্যে শুরু করেছে বিজেপি বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিও ৪৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে। সেই নিরিখে তারা পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করেছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে তৃণমূল ৪৪.৯ শতাংশ ভোট পেলেও সেই হার কমে গেছে লোকসভা নির্বাচনে। তাই বিজেপি চাইছে তৃণমূলের ভোটের হার আরও যেন কমে যায়। সেই ছক কষা শুরু হয়ে গেছে বলে বিজেপি সূত্র জানিয়েছে।
তৃণমূলের ভোট কমানোর ছকে বিজেপি প্রথমে ভোট কাটাকাটির দিকেই নজর দিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। যেহেতু এখনও তৃণমূলের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের প্রায় সিংহভাগ তাদের পক্ষে বলে ধারনা তাই সেখানেই কিভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। যদি মিম বা আব্বাস সিদ্দিকী অবশেষে শাসক দলকেই সমর্থন জানিয়ে বসে সেই আগাম অনুমানে বিজেপি অন্য ছক কষছে বলে জানা যাচ্ছে।
মুসলিমরা যাতে তাদের পুরো ভোট না দিতে পারে সেটাই এখন বিজেপির প্রধান পরিকল্পনা বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে। সেই মতো রাজ্য বিজেপি থেকে নাকি দাবি তোলা হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন হোক রমযান মাসে। রমযান মাসে ভোট হলে রোযা বা উপবাস করে মুসলিমদের ভোটদানে অনীহা সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য। ফলে, মুসলিমদের ভোটের হার কম পড়লে আখেরে লাভবান হবে বিজেপি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে রমযান শুরু হওয়ার কথা ১৪ এপ্রিল। যদিও চাঁদের উপর নির্ভর করে রমযান মাস শুরু হয়। তা হলেও ধরে নেওয়া যায় একদিকে পয়লা বৈশাখ অন্যদিকে রমযান মাস, এই দুটিকে ঢাল করলে ভোটের হার কমানো যেতে পারে। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, পুরো এপ্রিল মাসে কয়েক দফায় ভোট করতে চায় বিজেপি। রমযানের প্রথম দিন নিয়ে যেহেতু মুসলিমদের মধ্যে অপেক্ষায় থাকতে হয় চাঁদের উপর। তাই সেটিকে ব্যস্ততার মধ্যে রাখতে ১৪ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট করলে ফায়দা পাওয়ার আশায় থাকবে বিজেপি। এভাবে যদি মুসলিম প্রধান জেলা গুলিতে রমযান মাসের মধ্যে কয়েক দফার নির্বাচনের দিন ফেলা যায় তাহলে বিজেপি যে সুবিধা পাবে তা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া এক বরিষ্ঠ নেতা তার ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে শুরু করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাহলেও কি সত্যিই রমযান মাসে ভোট ঘোষণা করে বিজেপি তৃণমূলের ভোটের হার কমানোর ছক কষছে, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ১০.১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এছাড়া, সিপিএম ১৯.৭৪ শতাংশ ও ১২.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাদের ভোটের হার বাড়িয়ে নেয়। তবে, যেহেতু বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত আলাদা তাই বাম ও কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তির উপর অনেকটাই নির্ভর করতে পারে আগামী বিধানসভার নির্বাচন। কারণ, বাম কংগ্রেস যদি হয়ে মিলিত ৩১ শতাংশ না হরেও কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে যায় তাহলে বিজেপির কল্কে পাওযা মুশকিল। কারণ, এখন মোদি হাওয়া রাজ্য থেকে উধাও। আর মমতা একর পর এক জনমোহিনী ‘নির্বাচনমুখী’ প্রকল্প ঘোষণা করায় বিজেপি যতটা আশা করছে তা বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে যে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে তৃণমূলে বড় ভরসা তাতে ভাঙন ধরতে পারে যদি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল মিম প্রার্থী দেয়। কিন্তু যেহেতু মিম সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলে দিয়েছেন, বাংলা মিমের হয়ে শেষ কথা বলবেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী তাই সমীকরণ পালটে যেতে পারে। সরাসরি মিকে নিযে যে আবেগ তা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে মুখ করলে সফল হবে কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যে মিম সমর্থকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct