বেজিং: সম্প্রতি আত্ম জীবনীকার অস্টেন আইভেরির সঙ্গে মিলে একটি বইটি লিখেছেন ক্যাথেলিকদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে উইঘুরদের কথা নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি তাঁদের ' নিপীড়িত ' জনগোষ্ঠী বলে উল্লেখ্য করেছেন। আর এই সামলোচনাকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি করল চিন। চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র লিজিয়ান দাবি করেন, চিন সবসময়ই সমানভাবে জাতিগত সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকারের সুরক্ষা দেয়।
জানা গিয়েছে, পোপ তাঁর ‘লেট আস ড্রিম: দ্য পাথ টু এ বেটার ফিউচার' নামে বইটি রোহিঙ্গা, উইঘুরদের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন,‘আমি মনে করি রোহিঙ্গা, দরিদ্র উইঘুর ও ইয়াজিদিরা নির্যাতিত জনগোষ্ঠী।’ বইটির ১৫০ পৃষ্ঠায় এই উক্তি করেছেন পোপ।
উইঘুর ইস্যুতে এটাই পোপ ফ্রান্সিসের প্রথম কোনও মন্তব্য। রাষ্ট্রসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, চিনা বন্দিশিবিরগুলোতে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যম উইঘুর টাইমসের দাবি, এসব শিবিরে প্রকৃত বন্দির সংখ্যা ৩০ লাখ।
চিনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার সেখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে বেইজিং। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে। চিন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফাঁস হওয়া রিপোর্টে চিনে উইঘুর মুসলমানের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের চিত্র উঠে আসে। জিনজিয়াং অঞ্চলে তিন হাজারের বেশি উইঘুরের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১৩৭ পৃষ্ঠার সেই রিপোর্টের প্রতিটি পৃষ্ঠায় ভিন্ন ভিন্ন ছক তৈরি করা হয়েছে। এসব ছকে ওই ব্যক্তিরা কতবার নামাজ পড়েন, কী পোশাক পরেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। এমনকি দাড়ি ও বোরকার জন্যও লোকজনকে বন্দি রাখার নজির মিলেছে।
উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মুসলমান। তাদের মুখাবয়ব, ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে চিনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী হানদের চেয়ে বরং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সাদৃশ্য বেশি। তবে গত কয়েক দশকে লাখ লাখ হান চাইনিজ জিনজিয়াংয়ে বসতি গড়ে তুলেছে। ২০১৭ সালে উইঘুর মুসলমানদের জন্য যখন কর্তৃপক্ষ বন্দিশিবির চালু করে, তখন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কিছু বিশ্বস্ত কর্মী উইঘুর সমাজের ভেতরকার তথ্য বের করে আনার কাজটি করে। তারা প্রত্যেকে কয়েকটি করে বাড়ির দায়িত্ব নেয়। তারা সেসব বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে থাকে এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে নোট নেয়। তাদের জীবনাচরণ, ধর্ম বিশ্বাস, বাড়িতে ধর্ম চর্চার পরিবেশ অর্থাৎ কী কী আচার পালিত হয়, বাড়িতে কয়টি কুরআন শরিফ আছে? এমন সব বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তারা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct