আপনজন ডেস্ক: ‘চলো স্বপ্ন দেখি-মুর্শিদাবাদ’ ও উইনার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-সাগরদিঘী’র যৌথ উদ্যোগেসাগরদিঘী ব্লকের বিনোদবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিট-২০২০ পরীক্ষায় সফল ব্লকের ৭ জন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অনাড়ম্বর অথচ ঐতিহাসিক সাক্ষাতকার মূলক সুন্দর মিলন উৎসব।
নিট-২০২০র সর্বভারতীয় মেডিকেল পরীক্ষায় ৭২০-র মধ্যে ৬৪৫ নম্বর পেয়ে ৫০০২ র্যাঙ্ক করেছে তেঘরি কয়াল পাড়ার কৃতী ছাত্র ইয়মিন সেখ।ইয়াসমিনের কাছ থেকে আমরা শুনলাম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তার সফল্য অর্জনের কাহিনী।
সর্বভারতীয় মেডিকেল পরীক্ষায় ৬০১৫ র্যাঙ্ক করেছে গৌরীপুরের হানিসবাগ গ্রামের কৃতী ছাত্র সোহেল রাণা। সেও দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়ে নিট জয় করেছে। নিট-এ৬৩৯ পেয়ে ৬১২৭ র্যাঙ্ক করেছে চণ্ডীগ্রাম পোঃ আদিবাসী বেলডাঙ্গার আল-আমিন হোসেন।কলকাতার পার্ক সার্কাসে আল আমীন কোয়েস্ট অ্যাকাডেমিতে জয়েন্ট এন্ট্রান্স প্রস্তুতি চলাকালীন বাবার অসুস্থতা, বাবাকে বাঁচানোর জন্য দাদা-ভাইয়ের আপ্রাণ চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বাবার মৃত্যুর করুন কাহিনী। বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে দাদার টিউশানির উপর নির্ভর করে সফল হওয়ার উজ্জ্বল অথচ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মর্মন্তুদ কাহিনীরয়েছে তার সাফল্যের পিছনে।
৬৩৬ নম্বর পেয়ে ৬৯০৫ র্যাঙ্ক করেছে বিনোদবাটি গ্রামের রুনা খাতুন। রুণার মুখে শোনা গেল তার স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা মায়ের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের কথা। রুনা বলতে বলতে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল, শ্রোতৃমণ্ডলীর সবার চোখে জল।
নিট-এ১৪৭৭৬ র্যাঙ্ক করেছে দিয়াড়া গ্রামের আনিসুর রহমান মল্লিক। বাবা প্রান্তিক চাষী। চাষ-আবাদ করে কোনক্রমে সংসার চলে। ছেলের সাফল্যে খুব খুশি কিন্তু ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগান নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ।
এছাড়া,২৬৬০৮ র্যাঙ্ক করেছে পোপাড়া গ্রামের আয়েশা খাতুন। আয়েশা তার আলোচনায় প্রাঞ্জল ভাযায় উপস্থাপন করে তার সংগ্রামের কাহিনী। অভাবের সংসার কোচিং নেওয়ার মত আর্থিক সঙ্গতি তার ছিলনা। মায়ের সঙ্গে সংসারের কাজ সামলে বাড়িতে থেকেই ইউ-টিউবের সাহায্য নিয়ে একক প্রচেষ্টায় পড়াশোনা করে সাফল্য অর্জন করেছে অসামান্য প্রতিভার অধিকারিণী আয়েশা খাতুন।
আর ৩১৩১৪ র্যাঙ্ক করেছে কাবিলপুরের রঞ্জিতপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা ছাত্রী মাহফুজা খাতুন। অসুস্থতার কারণে দেহের ওজন স্বাভাবিক চাইতে অনেক কম কিন্তু প্রচণ্ড মনের জোর, অফুরন্ত প্রাণশক্তি, অপূর্ব বাচনশৈলীর অধিকারিণী ও অত্যন্ত মেধাবী মাহফুজা সভাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে তার বাগ্মীতায়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন 'চলো স্বপ্ন দেখি- মুর্শিদাবাদ' গোষ্ঠীর কৃষ্ণেন্দু কুমার মণ্ডল (প্রকল্প আধিকারিক তথা জেলা মঙ্গল আধিকারিক, অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগ, মুর্শিদাবাদ) ডা. একেআজাদ (কর্ণধার বহরমপুর সিটি হাসপাতাল), গোলাম কিবরিয়া (অধ্যক্ষ, তপঃজাতি কেন্দ্রীয় ছাত্রাবাস), মৃন্ময় সরকার (শিক্ষক),আবুল হোসেন (শিক্ষক)শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব সাহেব। উপস্থিত ছিলেন উইনার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট- সাগরদিঘী এর কর্ণধার সুমন শরীফ হোসেন সহ অন্যান্য কার্যকরী কমিটির সদস্যগণ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান সাহেব ও এলাকার অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
অনুষ্ঠানে অতিথিগণের মধ্যে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন মাননীয় প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, ডা. একেআজাদও কৃষ্ণেন্দু কুমার মণ্ডল প্রমুখ।
বক্তারা প্রত্যেকে তাদের আলোচনায় সফল ছাত্র ছাত্রী ও তাদের বাবা-মা ও যে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাদের সাফল্যের জন্য অবদান রেখেছে তাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানান। সকলেই কৃতী ছাত্র ছাত্রীদের আশীর্বাদ ও সাফল্য কামনা করে আলোচনা শেষ করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct