সবুজ পৃথিবীর জন্য সবুজ হাইড্রোজেন
তুহিন সাজ্জাদ সেখ
________________________
সম্প্রতি ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড ও ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার একসাথে হাত মেলাল সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের উদ্দেশ্যে।হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং সাধারণত ভারতবর্ষে এই প্রযুক্তি বিদেশ থেকে কিনতে হত।এই সমস্যা মেটাতে এই দুটি সংস্থা আগামী দিনে দেশজ ক্ষারীয় তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগ বাড়ানোর জন্য যৌথভাবে কাজ করবে।এই পরিকল্পনা আমাদের দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে এবং পরিবেশকেও দূষণমুক্ত রাখবে। অশোধিত তেল শোধন করার কাজে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেনের প্রয়োজন হয়। অশোধিত তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সালফার (সালফার-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড যা পরবর্তীতে সালফিউরিক অ্যাসিড রূপে) উপস্থিত থাকে যা পরিবেশে অতিরিক্ত দূষণ ঘটায়।এই সালফার কে বের করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক উপায়ে হাইড্রোজেনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। তাই পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন জরুরী। সাম্প্রতিক কালে শোধনাগারে প্রাকৃতিক গ্যাসের “স্টীম মিথেন রিফর্মিং” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা হয়।এই পদ্ধতিতে নিকেল বা কখনো কোন বিশেষ ক্ষেত্রে প্লাটিনাম ধাতুর উপস্থিতিতে প্রাকৃতিক গ্যাস (কিংবা মিথেন গ্যাস) ও জল একত্রে তপ্ত করলে ‘সিন গ্যাসে’র মিশ্রণ তৈরি হয়।সিন গ্যাস হল হাইড্রোজেন ও কার্বন-মনো-অক্সাইডের মিশ্রণ,যাকে ধূসর হাইড্রোজেন ও বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে হাইড্রোজেনের উৎস হিসেবে এই মিশ্রণটি ই শোধনকার্যে ব্যবহৃত হয়;ফলে পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-মনো-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ঘটায়।
ঠিক এই সমস্যার থেকে পরিবেশকে মুক্তি দিতে এই দুই সংস্থার যৌথ উদ্যোগ দেশীয় ক্ষারীয় তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্বন বিহীন অর্থাৎ সবুজ হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা।এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত দুটি বিদ্যুদ্বাহকের উপস্থিতিতে সরাসরি বিধৃত প্রবাহের দ্বারা পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড বা সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড ও জলের তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণের বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করা হয়। নিকেল অক্সাইডের মধ্যচ্ছদা দিয়ে আলাদা করা ধনাত্মক বিদ্যুদ্বাহকে অক্সিজেন জমা হয় এবং ঋণাত্মক বিদ্যুদ্বাহকের কাছে হাইড্রোজেন জমা হয়।এই উৎপন্ন হাইড্রোজেন কেই কার্বন মুক্ত বা সবুজ হাইড্রোজেন বলা হয়; এটি পরিবেশবান্ধব এবং শোধনাগারে ব্যবহৃত হয়। নিঃসন্দেহে এই প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগ ভারতবর্ষকে তার ২০৭০ সালের মধ্যে গ্রীণহাউস গ্যাসের শূন্য নির্গমন ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরনযোগ্য শক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাপক সাহায্য করবে। প্রকৃতি তথা পরিবেশে তথা পৃথিবী হবে নির্মল, দূষণমুক্ত--- আশা রাখা যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct