পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী,আপনজন: সংবাদসূত্রে প্রকাশ, কলকাতা সংলগ্ন ভাঙড়ের এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করার তোড়জোড়ে ব্যস্ত রাজ্য সরকার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ ভাঙড়ই কেন? ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই বিমানবন্দর হলে অন্তত পনেরো থেকে কুড়িটি গ্রামের অস্তিত্ব লোপ পাবে। এইসব গ্রামের হাজার, হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু পিছড়ে বর্গের মানুষ, তাঁরা যাবেন কোথায়? বোঝা যাচ্ছে যে বিমানবন্দর তৈরির নামে তিন-চার অতি উর্বর ফসলী জমি অধিগ্রহণ হবে, মানুষের কৃষি জমি চলে যাবে। এটা আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। বর্তমান রাজ্যসরকার কি তার ঘোষিত জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নীতি থেকে সরে আসছেন? এটা একটা খুব সঙ্গত প্রশ্ন। আমরা দেখেছি, পাশেই রাজারহাটে হাজার, হাজার বিঘে জমি অধিগ্রহণ করে ওখানকার গরীব সংখ্যালঘু-নিম্নবর্গের মানুষদের কি অবস্থা হয়েছে । সেই মানুষদের সিংহভাগ অংশের কি অবস্থা আমরা সকলেই জানি। বৃহত্তর চিত্র তো এটাই। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? ভাঙড়েও সেই পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত।
এই বিশাল এলাকায় মানুষের প্রয়োজন শিক্ষার পরিকাঠামো, প্রয়োজন স্বাস্থ্যের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, প্রয়োজন কর্মসংস্থান। ভাঙড়ে উর্বর কৃষিজমি আছে, সেখান থেকে উৎপাদিত শাকসবজি কলকাতা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে যায়। এমনকি ভিনরাজ্য কিংবা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কি এমন হলো সরকারের নীতিতে যে তারা এইরকম পদক্ষেপ নিতে চলেছে, যেখানে এধরনের ফলনশীল জমি নষ্ট করতেও তারা পিছপা নয়?আমরা সদুত্তর চাই। ভাঙড়ের ওপর দিয়ে চারটি খাল বয়ে যাচ্ছে। এগুলি দিয়ে কলকাতার বর্জ্য, দূষিত জল বয়ে যাচ্ছে। এই খালগুলির জন্য বহু বিঘা তিন ফসলী জমি ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে। এই খালগুলি পরিবেশ দূষিত করছে। পরিনত হয়েছে ম্যালেরিয়ার আঁতুড়ঘরে। প্রতিবছর বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই রোগে। কিন্তু খালগুলির বিনা সংস্কারে নোংরা, দূষিত জল বয়ে নিয়েই চলেছে। ভাঙড়ের বুকে তৈরি হল চর্মনগরী, যদিও স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হল না। তাদের ঐ চর্মনগরীতে কাজে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হল না। উপরন্তু এই চর্মনগরী তৈরি হল সেই কৃষিজমি নষ্ট করেই। আবার, রাজারহাট-নিউটাউনের পাওয়ার গ্রিড বসিয়ে দেওয়া হল ভাঙড়ের কৃষি জমির ওপর তার দশ শতাংশ জমি গাজীপুর মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি। সুতরাং, দেখাই যাচ্ছে দিনদিন জমি কমেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, ওয়াকফ জমিও বেহাত হচ্ছে। আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি প্রশ্ন করতে চাই, সিঙ্গুরে বিমানবন্দর তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করুন। অন্ডালের বিমানবন্দরকে সঠিকভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত করুন। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার বিমানবন্দর চালু করুন। আগে ভাঙড়বাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিন। রেলের মানচিত্রে ভাঙড়ে সংযুক্তিকরণের উদ্যোগ নিন, হাসপাতাল পরিকাঠামো উন্নত করুন, চাষীদের জন্য উন্নতমানের হিমঘর তৈরির ব্যবস্থা করুন। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি আপনাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবো। কিন্তু জোর করে জমি নিয়ে বিমানবন্দর বানানোর নামে সংখ্যালঘু পিছড়ে বর্গের মানুষদের ভিটেমাটি ছাড়া করে উচ্চবর্গীয় নগরায়ন আমরা কোনো অবস্থাতেই মানবো না।
অনুলিখন: সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct